জাতীয় শোক দিবসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বরগুনা-১ আসনের এমপির সামনেই পুলিশের লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয়েছেন শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা শিল্পকলা একাডেমির মূল গেটে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছলে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত এক গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এদিকে এ ঘটনায় কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরমের গাড়ি ইটপাটকেলে ভাঙচুর হয়। পরে শিল্পকলা ও লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫টি দেশীয় রামদা ও চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম তারেক রহমান বলেন, শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ গিয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় একটি গ্রুপ শিল্পকলা একাডেমির ভিতরে প্রবেশ করে। শিল্পকলা একাডেমির দ্বিতীয় তলা থেকে পুলিশের গাড়িতে ইট ছুড়ে মারে। পুলিশ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিল্পকলায় প্রবেশের সময় শিল্পকলার ছাদ থেকে তাদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে অজ্ঞাত লোকজন। তাদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপের কারণে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে।
নদীবন্দর থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী নদীবন্দরে যায়নি।
সভাপতি পদবঞ্চিত ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সবুজ মোল্লা বলেন, শিল্পকলা একাডেমিতে আমরা ছিলাম। কে বা কারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে তা আমরা জানি না। হঠাৎ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে শতাধিক নেতাকর্মী রক্তাক্ত আহত হয়।
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, আমি শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানে ছিলাম। শুনতে পেলাম হল রুমের বাইরে গণ্ডগোল চলছে। বাইরে বের হয়ে এডিশনাল এসপিকে ডেকে জানতে চাইলাম এখানে কী হয়েছে। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতে থাকে। এরই মধ্য কিছু পুলিশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। আমার ও পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজের সামনে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। জাতীয় শোক দিবসে এটা আমি আশা করিনি।
বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহম্মদ বলেন, আমাদের পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করেছে। এ কারণে স্বাধীন ও জসিম মোল্লা নামের দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তবে কোনো মামলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন। এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সদ্যঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানাতে থাকে।