চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জড়িত- এমন প্রমাণ রয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে।
মিতু হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়ার দিন (মঙ্গলবার) এমনটি জানিয়েছেন হত্যা মামলার তদারকি কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা। তিনি বলেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে এ মামলার তদন্ত করা হয়েছে।
পিবিআই কখনো পেশাদারিত্বের বাইরে যায়নি উল্লেখ করে পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, হত্যাকাণ্ড কেন সংঘটিত হয়েছে তা অনেকবার বলেছি। বাকিটা আদালতে বিচারের সময় পাওয়া যাবে। সব রকমের তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আড়াই বছর তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়েছি কারা কারা জড়িত। বাবুল আক্তার কীভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তার তথ্য প্রমাণও পাওয়া গেছে।
পিবিআইয়ের দাবি, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়। অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে তিনি স্ত্রী মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ জন্য সোর্সের (তথ্যদাতা) মাধ্যমে তিনি তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন।
মঙ্গলবার মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পিবিআই। বিকেল ৩টায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় প্রতিবেদন জমা দেন।
বাবুলকে প্রধান আসামি হিসেবে উল্লেখ করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও ছয়জনকে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্যরা হলেন- কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতাশেমুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খায়রুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, মামলার মূল অভিযোগপত্র ২০ পৃষ্ঠার। দুই হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার কেস ডকেটে আসামি ও সাক্ষীদের জবানবন্দিসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
পিবিআই-এর পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এক বিদেশি নারীর সঙ্গে বাবুলের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তাদের একটি সন্তান হয়। সে কারণেই বাবুল মিতুকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। প্রযুক্তির সাহায্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে।
কামরুল ইসলাম শিকদার মুসাসহ ছয়জন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন বলেও পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উন্মোচন করা হয়েছে। হত্যার পর বাবুল মুসাকে আত্মগোপনে যেতে বলেন- এমনটি উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে।
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কারাগারে আছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।
এদিকে, পিবিআইয়ের হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবি করে ৮ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলার আবেদন করেন বাবুল আক্তার। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালতে মামলার আবেদন করেন তিনি। মামলাটি আদেশের অপেক্ষায় আছে।