জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ইস্যুতে সব সময় আলোচনায় থাকে জাতীয় পার্টি (জাপা)। কখনো জোট গঠন, কখনো অন্তর্কোন্দলে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন শীর্ষ নেতারা। এবারও নির্বাচন সামনে রেখে জোট নিয়ে জাপা থেকে এরই মধ্যে এসেছে নানামুখী বক্তব্য। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসাকে কেন্দ্র করেও রটেছে ভিন্ন সমীকরণ। এসবের মধ্যেই জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিয়েছেন কাউন্সিলের ঘোষণা। রওশন সংশ্লিষ্টতায় এর পরপরই মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ দলের বেশ কয়েকজনকে দল থেকে অব্যাহতি কিংবা কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
প্রায় বছরখানেক থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার প্রহর গুনছেন রওশন এরশাদ। শোনা যাচ্ছে অক্টোবরেই তিনি দেশে ফিরবেন। আগামী ২৬ নভেম্বর রওশন এরশাদের ডাকা কাউন্সিলের প্রস্তুতিও চলছে বেশ জোরেশোরে। সিলেট, গাজীপুরসহ ১২ জেলায় কাউন্সিলের প্রস্তুতি কমিটিও হয়েছে। কাউন্সিল সফল করতে জেলায় জেলায় যাচ্ছেন রওশনপন্থি নেতারা। যদিও দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা রওশনের ডাকে সাড়া দেননি।
রওশনপন্থিরা বলছেন, জাপা থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন দলের এমন নেতারা যোগাযোগ না করলেও তৃণমূল থেকে আসছে ব্যাপক সাড়া। সবকিছু ঠিক থাকলে অক্টোবর মাসেই রওশন এরশাদ দেশে আসবেন। তখন কাউন্সিল করার যাবতীয় কাজ আরও জোরেশোরে হবে। যে কোনো মূল্যে কাউন্সিল সফল করতে নির্দেশনা দিয়েছেন রওশন।
এদিকে কাউন্সিলের তোড়জোড়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের। কাউন্সিল ও রওশন এরশাদকে নিয়ে যারা মুখ খুলছেন তাদের বহিষ্কার কিংবা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে দলের একাধিক সূত্র।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রওশন এরশাদ ইস্যুতে পক্ষ নেওয়ায় জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। এর তিনদিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি দেওয়া হয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধাকে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর জিএম কাদেরের উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মহসিন উল ইসলাম ওরফে হাবুলকে দল থেকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়।
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রংপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান একেএম আব্দুর রউফ মানিক আর ২ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. কে আর ইসলামকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
এর আগে হঠাৎ করেই গত ৩০ আগস্ট দলের সম্মেলন করার ঘোষণা দেন রওশন এরশাদ। ২৬ নভেম্বর ডাকেন দলের কাউন্সিল। যদিও জিএম কাদেরের দাবি কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার রওশন এরশাদের নেই।
রওশন এরশাদের ডাকা সম্মেলনের প্রস্তুতি সমন্বয়ের জন্য দলের ছয়জন কো-চেয়ারম্যানকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়। তারা হলেন- দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলাম।
কাউন্সিল ডাকার পরদিনই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভা ডেকে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জাপার চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভায় মসিউর রহমানও অংশ নেন ও সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেন। পরে তার নেতৃত্বেই সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত স্পিকারের কাছে পৌঁছানো হয়। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর হয়নি সংসদে।
কাউন্সিল প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থি এক নেতা বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ম্যাডামের ডাকে সাড়া দেননি। এটা তো ওনাদের ঠিক হয়নি। ম্যাডাম তো তাদের নিয়েই কাউন্সিল করতে চেয়েছিলেন। এর আগে ম্যাডাম ডাকলেন হোটেলে, তারা আসেননি। যারা এমপি বা সংসদ সদস্য তারা আসতে চাইছেন না। রওশন ম্যাডামের কথা হলো আমার কর্মীদের গুরুত্ব অনেক বেশি সংসদ সদস্যদের তুলনায়।’
জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটির অনেক বড় নেতার অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই নেতা বলেন, ‘কাদের সাহেবকে এরশাদ সাহেবের ভাই হিসেবে সব সময় দেখছি। দুর্দিনে কোনোদিন কাদের সাহেবকে পাইনি। মিটিং, মিছিলে কোথাও ছিলেন না তিনি। চুন্নু সাহেবও আমাদের দুর্দিনে কোনোদিন ছিলেন না। রওশন এরশাদের চাওয়া দুর্দিনে যারা দলে ছিলেন তারা যেন ফিরে আসে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রওশন এরশাদের শক্তি।
‘তার বিশ্বাস কাউন্সিলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাকে সমর্থন দেবেন। আর এনাদের ভয় হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের লোক যদি আসে তাহলে তারা সমর্থন পাবে না। বিএনপি যা বলছে তারা তা বলছে, রওশন এরশাদের কথা হচ্ছে কোনো অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে আমি যাবো না।’