অনিয়মের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটের অনিয়মে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ভোট বন্ধের পরপরই ‘সুষ্ঠু ভোট’ দাবি করে লিখিত দেওয়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাপের মুখে তাঁরা এ কাজে বাধ্য হয়েছেন। কার নির্দেশে এ কাজ করেছেন- সেই নাম কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানানোর পাশাপাশি তাঁরা এসব কাজের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইসি কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছেন, প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। জমা দেওয়ার জন্য তাঁরা ইসি সচিবের বাসায় রয়েছেন।
গত ১২ অক্টোবর এ উপনির্বাচনের ভোট শুরুর পর ঢাকায় নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষণ কক্ষের সিসিটিভিতে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখে একে একে ৫১ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। পরে পুরো ভোট বন্ধের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে পরের দিন ১৩ অক্টোবর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এতে অশোক কুমার দেবনাথকে আহ্বায়ক, যুগ্ম সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাসকে সদস্য এবং যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হয়। গতকাল ছিল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন।
তদন্ত কমিটির সূত্র জানিয়েছে, বন্ধ হওয়া ৫১ কেন্দ্রের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে তাঁরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে তাঁরা নতুন কোনো অনিয়মের তথ্য বের করতে পারেননি। ঢাকা থেকে সিসিটিভির ফুটেজ নিয়েই তাঁদের কাজ করতে হয়েছে। সাক্ষীর অভাবে বেশ কিছু ফুটেজের ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়নি। এ ছাড়াও ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের বেশিরভাগই ছিল নির্বাচনী এলাকার বাইরের।
সূত্র জানায়, সুষ্ঠু ভোট হয়েছে- এমন লিখিত দেওয়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বলেছেন- তাঁরা এ কাজে বাধ্য হয়েছেন। তবে কার নির্দেশে এমন কাজ করেছেন, তাঁর নামও কমিটির কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি এসব কাজের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের মধ্যে ৫০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং বাকি সাড়ে ৫০০ পৃষ্ঠায় রয়েছে সাক্ষীদের বক্তব্য ও অনিয়মের নানা নথি।
ভোটকেন্দ্রে হওয়া অনিয়মগুলো চিহ্নিত করতে সরেজমিন গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়িতে গিয়েছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। দুই উপজেলার ১৪৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে
সাঘাটায় ৮৮টি এবং ফুলছড়িতে ৫৭টি কেন্দ্র রয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে ৬৮৫ জনকে নোটিশ করা হলেও ৬২২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্ট। এ এজেন্টদের সবাই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা নন বলে তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়েছে।