গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরও লোকসান করছে পেট্রোবাংলা। আর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করলেও বাড়ানো হয়নি। এ দুই সরকারি সংস্থার এমন তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলাদা বৈঠকে। তাই বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে আইএমএফ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের পর এবার এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফ। গতকাল রোববার সকালে বিইআরসি কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। এতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পুরো প্রক্রিয়া জানানো হয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধিদলকে।
বৈঠকে উপস্থিত বিইআরসির একাধিক কর্মকর্তা এটি নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেন, মূলত দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছে আইএমএফ। বিইআরসি কী কাজ করে, কীভাবে করে; এটিও জানার আগ্রহ ছিল তাদের। বছরে কতবার দাম নির্ধারণ করা হয়, দুই থেকে তিনবার দাম বাড়ানোর সুযোগ আছে কি না। এর জবাবে বিইআরসি জানিয়েছে, একাধিকবার দাম বাড়ানোর সুযোগ আইনে আছে। আবেদন যৌক্তিক হলে তা নিয়ে গণশুনানির পর সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত ভর্তুকির বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এর জবাবে বিইআরসি জানিয়েছে, ভর্তুকির সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সরকারের। কমিশন কাউকে ভর্তুকির সিদ্ধান্ত দেয় না। তারা শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব বের করে ঘাটতি মেটানোর জন্য দাম নির্ধারণ করে। এরপর সরকার ভর্তুকির সিদ্ধান্ত জানালে তা ঘাটতি থেকে বাদ দিয়ে বাকিটার জন্য দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) হিসাব করা হয় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি জানিয়েছে, কেন্দ্র ভাড়া পিডিবির খরচের অংশ। তাই এটা সব সময়ই হিসাব করা হয়। এ নিয়ে কোনো পক্ষের আপত্তি থাকলে তা নিষ্পত্তির জন্য কমিশনের আলাদা ট্রাইব্যুনাল আছে। সেখানে শুনানি করা হয়।
বিইআরসির গণশুনানিতে সাংবাদিকেরা উপস্থিত থাকেন কি না; আইএমএফ প্রতিনিধিদলের এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি জানিয়েছে, শুধু সাংবাদিক নন, খাতসংশ্লিষ্ট সব পক্ষ উপস্থিত থাকে।
ভোক্তাদের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন। দাম না বাড়ানোয় বিদ্যুৎ খাতে সরকারের প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বিইআরসি জানিয়েছে, পিডিবি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছিল। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে এর কী প্রভাব পড়বে, সেই তথ্য দেয়নি। এতে অর্থনীতির ওপর কী ধরনের চাপ পড়বে, তার মূল্যায়ন করেনি। তাই দাম বাড়ানোর বিষয়ে সম্মতি থাকলেও তা করতে পারেনি কমিশন।
এ ছাড়া পেট্রোবাংলার লোকসানের বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। জবাবে তাদের বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলা ছাড়া গ্যাস খাতের সব কোম্পানি মুনাফায় আছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য পেট্রোবাংলার বাড়তি টাকা লাগছে। এলএনজি আমদানির খরচ দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে হিসাব করা হয় কি না—আইএমএফের এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি জানিয়েছে, এলএনজি আমদানির খরচ হিসাব করা হয়। এর আগে তারা দিনে ৮৫ কোটি ঘনফুট আমদানির কথা বলে দাম বাড়িয়ে নিয়েছে।