সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা থাকায় পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও দেশটির প্রধান বিরোধী নেতা ইমরান খানকে লংমার্চ স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে এ সম্পর্কিত একটি চিঠি পিটিআই চেয়ারম্যানের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বলেও শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রানা সানাউল্লাহ বলেন, ‘প্রথমত, রাজধানীতে রাজনৈতিক কোনো দলের সভা কিংবা এ জাতীয় কর্মসূচি সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধি। দ্বিতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো, পিটিআইয়ের লংমার্চ ঘিরে একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আগামীকাল থেকে রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হবে।’
ইমারান খানকে উদ্দেশ্যে করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার নিজের জীবন সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। কারণ, যদি সত্যিই সন্ত্রাসী হামলা ঘটে, সেক্ষেত্রে হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু থাকবেন আপনি।’
‘জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কেবল প্রয়োজন আপনার ওপর হামলা চালাতে ইচ্ছুক কাউকে বের করা; আপনি কি মনে করেন— তাদের জন্য এটা খুব কঠিন কোনো কাজ?’
‘আপনি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, শত্রু নন। এ কারণেই বলছি—এসব ছেড়ে দিন, পার্লামেন্টে আসুন। প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে পাকিস্তান ও জনগণের প্রতি আপনার যে দায়িত্ব রয়েছে তা পালন করুন।’
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্তণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইমরান খানের জনসভাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা নেটওয়ার্কের পাকিস্তান শাখা, তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), তেহরিক-ই লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) নাশকতার ছক কষছে বলে তথ্য পেয়েছেন তারা। ইমরানকে দেওয়া চিঠিতে সেসব তথ্যের উল্লেখও করা হয়েছে।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান ২০১৮ সালে ভোটে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী সেনাবাহিনীর সমর্থন তখন তার দিকে থাকলেও কিছু দিন পর তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
সেনা সমর্থন হারানো ইমরানের বিরুদ্ধে এই বছরের শুরুতে জোট বেঁধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল। তাতে হেরে গত এপ্রিলে ইমরানের সরকারের পতন ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হন মুসলিম লীগের শেহবাজ শরিফ, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।
ক্ষমতা হারানো ইমরান নতুন নির্বাচনের দাবি তুলে পাকিস্তানে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ লংমার্চের ডাক দেন। গত ২৮ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি।
৪ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল এই লংমার্চ; তার এক দিন আগে, ৩ নভেম্বর ওয়াজিরাবাদ শহরে সমাবেশ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান। তারপর শওকত খানম হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি রয়েছেন তিনি।
বুধবার ২৬ নভেম্বর থেকে ফের লংমার্চ শুরুর ঘোষণা দেন ইমরান খান। তারপর আজ বৃহস্পতিবার তাকে লংমার্চ স্থগিতের আহ্বান জানালেন রানা সানাউল্লাহ।