আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিকালে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে) নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনে কে পাচ্ছেন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব? এই প্রশ্নটিই এখন সবার মুখে মুখে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদেই থেকে যাচ্ছেন বলে তারা শুনছেন। তবে সাধারণ সম্পাদকের পদের দাবিদার হিসেবে আরও কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে।
এদিকে ওবায়দুল কাদের যদি এবারো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান, তাহলে তার মন্ত্রিত্ব রাখা না রাখার বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিতে হবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আর নতুন কেউ এলে তা মন্ত্রিপরিষদের বাইরের কেউ হবেন।
কারণ আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে সরকার ও দলের নেতৃত্ব আলাদা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গত চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এবারো সভাপতি পদে পরিবর্তন হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে মূল আলোচনা সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য পদগুলো নিয়ে।
সভাপতির পর সাধারণ সম্পাদকই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। টানা দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন ওবায়দুল কাদের। সম্মেলন সামনে রেখে তিনি গত দুই মাস জেলায় জেলায় দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। তার অনুসারীদের ধারণা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনিই থেকে যাচ্ছেন।
এদিকে সম্মেলনের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নিজের ব্যর্থতা ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন ওবায়দুল কাদের। কাউন্সিলে দায়িত্ব বদলালেও দলের জন্যই কাজ করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
সম্মেলনের প্রস্তুতি জানাতে শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ওবায়দুল কাদের। এটি এই মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদকের শেষ সংবাদ সম্মেলন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন ওবায়দুল কাদের। শনিবার দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন কমিটি হলে সেখানে তিনি তৃতীয় দফায় একই পদে থাকছেন কিনা, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে।
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দায়িত্ব বদলালেও এই দলেই আছি, দলের জন্যই কাজ করব।
দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কতটুকু সফল হয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষাও নেব, যেখানে ভুল আছে, আমরা সম্মিলিতভাবে আগামীতে চেষ্টাও করব। কে কোন দায়িত্বে সেটা ব্যাপার না, দায়িত্ব বদলালেও তো আমরা এই দলেই আছি।
ওবায়দুল কাদেরের বাইরে সাধারণ সম্পাদকের পদের দাবিদার হিসেবে আরও কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কাজী জাফর উল্যাহ ও আবদুর রহমান।
অন্যদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের প্রায় সবাই সাধারণ সম্পাদকের দাবিদার। এদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন মাহবুবউল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দলের একটা অংশ চাইছে ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদক পদে থাকুক। তিনি না হলে হাছান মাহমুদকে এই পদে দেখতে চায় তারা। তথ্যমন্ত্রী হিসেবে গণমাধ্যমে নিয়মিত উপস্থিতি এবং বিরোধী দলের সব আন্দোলনকেই নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারায় তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের অন্যতম দাবিদার- এমনটা মনে করেন তার অনুসারীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় একাধিকবার বাহাউদ্দিন নাছিমের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। দলের জন্য তার ত্যাগের কথা স্মরণ করেছেন। ফলে তাকেও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিবেচনা করছেন কেউ কেউ।