সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। একই দিন সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ পালন করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিপরীতমুখী এ দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনরা।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা কোনো সংঘাতে যেতে চান না।
অন্যদিকে সংঘাত তৈরির জন্য আওয়ামী লীগ বারবার পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতারা বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি দলটির পক্ষ থেকে প্রথম ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল (১১ ফেব্রুয়ারি) সেটি হওয়ার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ একদিন পরে (৫ ফেব্রুয়ারি) ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কর্মসূচির জন্য তারা ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে। তারপর বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। এতেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য উসকানি দিয়ে বিএনপিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়া।
দলটির নেতারা আরও বলেন, শনিবার সকাল থেকে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ইউনিয়নে আসবে। পরে সেখানে থেকে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হবে। দলের পক্ষ থেকে তৃনমূলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দিয়ে, সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আওয়ামী লীগ তার রাজনীতি হারিয়ে এখন বিএনপির পিছু হাঁটছে। বিএনপি যখন যে কর্মসূচি দিচ্ছে, তারাও একইদিন একই কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র তৈরি করে রেখেছেন দাবি করে টুকু বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছেও খবর আছে। তারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের ওপর আক্রমণ করবে। আর পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু জনগণ দেখেছে অতীতেও বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছে, এবারও করবে।
তিনি আরও বলেন, আজকেও আমার এলাকা সিরাজগঞ্জ থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এটা করে কি জনস্রোত থামানো যাবে? দেশের জনগণ এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে আর দেখতে চায় না।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজপথে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে। যাতে বিএনপিসহ অন্যরা রাজপথে কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে। তাছাড়া বিরোধী দলগুলো লাগাতার কর্মসূচি পালন করে যাবে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যদি মাঠের রাজনীতিতে না থাকে তাহলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে বার্তা যাবে দল হিসেবে আমরা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছি। আর এই বার্তা প্রভাব পড়বে আগামী সংসদ নির্বাচনে। এ কারণে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙা রাখছে।
তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দেশে যদি কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা হয় তার প্রথম দায় পড়বে আওয়ামী লীগের ওপর। ফলে আওয়ামী লীগ নিজেই তো সংঘাতের দিকে যাবে না, কোনো সংঘাত হোক এটা চায় না আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপির কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তাদের চাপে রাখাই আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য। এটাই হচ্ছে রাজনৈতিক কৌশল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি এখনো সে রকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত বিএনপির যে অবস্থান, তাতে দলটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে তারা ভোট পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখলে আওয়ামী লীগও একই কায়দায় রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এতে দলের কর্মীরা চাঙা থাকবেন। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও হয়ে যাবে।
এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো সংঘাতের আশঙ্কা করছি না। কারণ বিএনপি এক জায়গায় পদযাত্রা করবে, আমরা অন্য জায়গায় শান্তি সমাবেশে করব। ফলে বিএনপি না চাইলে কোনো সংঘাতের আশঙ্কা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি সংঘাতে যেতাম তাহলে একই জায়গায় প্রোগ্রাম ডাকতাম। কিন্তু আমরা তো একই জায়গায় প্রোগ্রাম করছি না। যেমন, বিএনপি নয়াপল্টনে পদযাত্রা করবে, আমরা শান্তি সমাবেশ করছি গাবতলীতে। তাই আশা করছি, কোনো সংঘাত হবে না।
এদিকে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যতক্ষণ আন্দোলন করবে, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অব্যাহত থাকবে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগের প্রতিদিনই কর্মসূচি আছে, তবে বিএনপির সাথে পাল্টাপাল্টি নয়।
বিএনপি এখনো সে রকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত বিএনপির যে অবস্থান, তাতে দলটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে তারা ভোট পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখলে আওয়ামী লীগও একই কায়দায় রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এতে দলের কর্মীরা চাঙা থাকবেন। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও হয়ে যাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) সাধারণ সম্পাদক বদিউল মজুমদার বলেন, একই দিন যখন বিপরীতমুখী দুটি রাজনৈতিক দল কর্মসূচির ঘোষণা দেয় তখন স্বাভাবিকভাবে একটা উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেটা অনেক সময় সংঘাতের দিকে গড়ায়। তারপর আমরা দেশে কোনো সংঘাত চাই না। কিন্তু এটা চাইলে তো আর হবে না। তার জন্য দরকার রাজনৈতিক সমঝোতা।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা সমঝোতা হয়েছিল। যার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীনরা অসাংবিধানিকভাবে এবং অন্যায়ভাবে এক তরফাভাবে তা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) বিলুপ্ত করছে। ফলে যখনই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় তখনই সংঘাত সৃষ্টি হয়। বর্তমানে দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা যাওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে আছে।