ঘুসের বিনিময়ে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশের কর্মীদের কাজের ভিসা দেওয়ার জন্য পাঁচ দশমিক চার কোটি সৌদি রিয়ালের (প্রায় ১৫৪ কোটি টাকার) সমপরিমাণ অর্থ নেওয়ার অভিযোগে সৌদি আরবের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ নাজাহা ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের দুই সাবেক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে। অবৈধ ওই ভিসা বাণিজ্যে জড়িত থাকার অপরাধে সাত বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সৌদি আরবের তদারকি ও দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ নাজাহা গত শনিবার তাদের টুইটে এ তথ্য জানিয়েছে।
নাজাহার বরাত দিয়ে সৌদি দৈনিক আরব নিউজ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত আবদুল্লাহ ফালাহ মুদাহি আল-শামারি ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত ও কনস্যুলার বিভাগের প্রধান এবং খালেদ নাসের আয়েদ আল-কাহতানি কনস্যুলার বিভাগের উপপ্রধান ছিলেন। সৌদি দূতাবাসের সাবেক এই দুই কর্মকর্তা সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কাছ থেকে অবৈধ ঘুস বাণিজ্যের কিছু অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা দুজনই ৫ কোটি ৪০ লাখ সৌদি রিয়াল ঘুস নিয়ে তার একাংশ সৌদি আরবে আর বাকি অর্থ দেশের বাইরে বিনিয়োগের কথাও স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের মামলা করা হয়েছে।
সৌদি দূতাবাসের অবৈধ ভিসা বাণিজ্যের ব্যাপারে দেশটির রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নাজাহাকে তথ্য দিয়েছে। সরকারি পদের ব্যবহার করে কেউ ব্যক্তিগত লাভ বা জনস্বার্থের ক্ষতিসাধন করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে অবসরে যাওয়া দূতাবাসের কর্মকর্তারাও ছাড় পাবেন না বলে উল্লেখ করেছে নাজাহা।
এর আগে কর্মী ভিসা দেওয়ার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে ঘুস নেওয়ার অভিযোগে মাস দুয়েক আগে ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃত দুই কর্মকর্তা তাদের মধ্যে অন্যতম। ঢাকা ছাড়ার পর তাদের সৌদি আরবে গ্রেফতার করা হয়।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, নাজাহা সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা ৬০ হাজার রিয়ালের বিনিময়ে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে সৌদির এক নাগরিককে ২ কোটি ৩০ লাখ রিয়ালের আর্থিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিলেন। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রিয়াদ অঞ্চল পুলিশ আদালতের নিরাপত্তাবিষয়ক সার্জেন্ট মেতাব সাদ আল-ঘনউম, রিয়াদে বিশেষ মিশন বাহিনীর করপোরাল হাতেম মাস্তুর সাদ বিন তাইয়েব এবং ফিলিস্তিনি বিনিয়োগকারী সালেহ মোহাম্মদ সালেহ আল-শালাউত।
অবৈধ ভিসা বাণিজ্যের বিস্তারিত তদন্তের পর বাংলাদেশি নাগরিক আশরাফ উদ্দিন আকনাদ, আলমগীর হোসেন খান, শফিক আল ইসলাম শাহ জাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ ভিসা বাণিজ্য ও সৌদি আরবের বাইরে অর্থপাচারের দায়ে ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ নাসের উদ্দিন নূর, জায়েদ উওসিদ মাফি, আবুল কালাম মোহাম্মদ রফিক আল ইসলাম, আজিজ আলহাক মুসলিম উদ্দিন ও আলামিন খান শহীদ আল্লাহ খানকেও গ্রেফতার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
নাজাহা বলেছে, গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অবৈধ ভিসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সৌদি আরবে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার রিয়াল পাওয়া গেছে। এছাড়া সোনা ও বিলাসবহুল যানবাহন উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অবৈধ কাজের ভিসা বিক্রির টাকায় কেনা হয়েছে এসব।