চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ইন্সপেক্টর (টিআই), সার্জেন্ট, উপ-পরিদর্শক (টিএসআই), সহকারী উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) ও কনস্টেবল পদে ঘনঘন বদলি হচ্ছে। নতুন কোনো স্থানে স্থির হওয়ার আগেই সরিয়ে অন্যত্র দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আবার কাউকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বদলি করা হচ্ছে। এতে পুরো জেলার ট্রাফিক বিভাগে এক ধরনের বদলি ‘আতঙ্ক’ তৈরি হয়েছে। যদিও জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এটা তাদের রুটিন দায়িত্ব।
ভুক্তভোগীরা জানান, চট্টগ্রাম ছোট কোনো জেলা নয়। এখানে যেভাবে বদলি করা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাসা পাল্টাতে হচ্ছে। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করানো যাচ্ছে না। ফলে ব্যহত হচ্ছে তাদের পড়ালেখা। যদিও জেলা পুলিশের ক্রাইম, বিশেষ কিংবা গোয়েন্দা কোনো শাখায় এভাবে বদলি করা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে এ ধরনের বদলির চর্চা থাকলেও নিকট অতীতে জেলায় কর্মকর্তাদের এভাবে বদলি করতে দেখা যায়নি।
এর কারণ জানতে জেলা ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তারা জানান, জেলা ট্রাফিকের প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত এক টিআইকে কয়েকমাস আগে এক উপজেলায় বদলি করা হয়। তবে তিনি নিজের কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে জেলা পুলিশকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারা তদবির করেন। এতে জেলা পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে অনেকটা গণহারে ও নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বদলি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, মনে হচ্ছে একজনের কারণে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের কষ্টটা স্যারদের বোঝা উচিত। বারবার বদলি হলে, বাচ্চারা পড়বে কোথায়? প্রতি মাসে তো আর বাচ্চাদের স্কুল বদলানো যায় না। আমাদের মন-মানসিকতা ভেঙে যাচ্ছে। কাজে মন আসছে না।
এদিকে কয়েকটি বদলির আদেশে দেখা যায়, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক এ.এন.এম ওয়াসিম ফিরোজ স্বাক্ষরিত একটি আদেশে ৩৯ সার্জেন্ট, টিএসআই ও এটিএসআইকে বদলি করা হয়। তবে তাদেরকে শুধুমাত্র ১১ দিন (২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) দায়িত্ব পালনের জন্য বদলি করা হয়।
এরপর গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক এ.এন.এম ওয়াসিম ফিরোজ স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে ট্রাফিকের ৫১ কনস্টেবলকে বদলি করা হয়। তাদেরকেও ২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর অর্থাৎ মাত্র ১০ দিনের জন্য। এ ঘটনার কয়েকদিন পর ৩১ ডিসেম্বর ১৫ সার্জেন্ট ও টিএসআইকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বদলি করা হয়।
২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম শফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত একটি আদেশে টিআই মো. কবির উদ্দিন সরকারকে ট্রাফিক প্রসিকিউশন শাখা থেকে বদলি চন্দনাইশ ট্রাফিক জোনের ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই আদেশে টিআই মো. তরিকুল ইসলামকে রাউজানে বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে ট্রাফিক প্রসিকিউশন শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এসপি ১১ জন টিআইকে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ অর্থাৎ ২৭ দিনের জন্য বদলি করেন। একই সঙ্গে ৩৫ জন সার্জেন্ট, টিএসআই, এটিএসআইকে একই সময়ের জন্য বদলি করা হয়। একই দিন ৫১ কনস্টেবলকে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারির জন্য বদলি করা হয়।
জেলা পুলিশে কর্মরত এক সার্জেন্ট বলেন, এর আগে যেখানে বদলি হয়েছিল, সেখানে বাবা-মা ও বউ-বাচ্চাদের রেখে এসেছি। বর্তমানে আমার স্ত্রী অসুস্থ। তার বিপদে আমার পাশে থাকা উচিত। কিন্তু আজ আমাকে অন্য জায়গায় ডিউটি করতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজনকে দেখতে মন চাইলে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে যেতে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস.এম. শফিউল্লাহ্ বলেন, বদলি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রতি মাসে একবার নিয়মভিত্তিক বদলি করে থাকি। ট্রাফিকের কাউকে রাতে থাকতে হয় না। তারা ডিউটি করে আবার চলে আসেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) প্রতি সপ্তাহে বদলি করা হয়। আমরা প্রতি মাসে একবার করে করছি।
টিআইয়ের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে এমনটা করা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।