বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবৈধ-অনির্বাচিত দখলদার সরকারের অধীনে বাংলাদেশ এখন প্রায় ধ্বংস রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে পতিত হচ্ছে। আজকে তাদের (সরকারের) দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকারের ব্যর্থতায় আজকে জনগণের জীবন দুঃসহ হয়ে পড়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, শান্তিশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি; এখানে লুটপাট এবং একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে পুরোপুরিভাবে খালি করে দেওয়া, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়ে অর্থব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত— সব কিছুতেই একটি নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের ন্যূনতম যে অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, আমাদের স্বাধীন মতপ্রকাশের যে অধিকার তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অধিকারগুলো অর্জন করেছিলাম, সেই অধিকারগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে একটি মাত্র উদ্দেশ্য— তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা আবারও প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটি তারা করতে চেয়েছিল ১৯৭৫ সালে।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে দেশে যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেই দলগুলোর সঙ্গে আমরা একজোট হয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে— এই সরকারের পদত্যাগ। আমরা নির্বাচনকালীন দেখেছি, এখানে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে জনগণ ভোট দিতে পারে না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুটি নির্বাচন দেখেছি, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে সেই দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যারা আমাদের সহযোগিতায় রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অনেক দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। আজকে কর্নেল অলি আহমদ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছে। আজকের আলোচনাই আমাদের শেষ নয়। আবার তার দলের অন্যান্য নেতার সঙ্গেও আলোচনা করব।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছি। এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, এই আন্দোলন মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়; এই আন্দোলন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করার আন্দোলন।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না ঘরে বাইরে কোথাও, তারা শান্তিতে থাকতে পারছে না। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। সাংবাদিকরাও লিখতে পারে না। কারণ আইন করে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য দেশকে স্বাধীন করা হয়নি। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল— প্রত্যেকটি মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করবে এবং তারা ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনা করবে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারা চাচ্ছে, যে কোনোভাবে একটি নির্বাচন করার জন্য। আমরা চাই এ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণ থাকবে। অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। এই দাবিগুলো নিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগও আন্দোলন করছে, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। এটা আওয়ামী লীগের পক্ষে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কারণ একদিন তাদের দাবিও এটিই ছিল। আমরা চাই প্রত্যেকে তাদের নিজের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। আগামীতে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ দেশ পরিচালনা করবে। তা হলে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পাবে দেশ, সামাজিকভাবে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারব। মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, এক বিচার শাসন থেকে আমরা মুক্ত পাব।