উপকূলের দিকে যতই এগুচ্ছে, ধরণ পাল্টে ততই পরাক্রমশালী হয়ে উঠছে গভীর বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আগানোর গতি কমেছে, বাড়ছে ঘূর্ণন কেন্দ্রে বাতাসের গতি। এভাবে শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলে ছোবল দিলে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটার প্যাটার্ন ছিল সিডিও (সেন্ট্রাল ডেন্স ওভারকাস্ট)। এখন হয়েছে বেন্ড প্যাটার্নের। অর্থাৎ এটি উচ্চ ক্ষমতার প্যাটার্নের দিকে যাচ্ছে।’
বেন্ড প্যাটার্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এই ধরণের ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ও বৃষ্টি ঝড়ানোর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। সঙ্গে থাকে প্রচুর বজ্রপাত এবং দমকা ও ঝড়ো হাওয়া।
অতি প্রবল ঝড়ের তোড়ে সাগরে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হবে। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধসের আশঙ্কা। জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
এই কর্মকর্তার পূর্বাভাস, ঝড়টি উপকূলের কাছাকাছি এলে এর কেন্দ্রে বাতাসের ঘূর্ণন গতি হবে ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার। এই গতি দমকা, ঝড়সহ ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এত গতিতে বাংলাদেশে এর আগে যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে তাতে কমবেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে ফসল, মৎস্য খামার, গবাদিপশু, পাখি ও গাছপালার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপকূলে আঘাত হানার আগে আবার ধরন পাল্টে যদি ‘আই ফরমেশন’-এ যায় তাহলে এর তীব্রতা আরও ভয়াবহ হবে।
গত ২৪ ঘন্টায় ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি বেড়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান।
মোখা আট থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। আর এই গতিতেই ধাবমান থাকলে রোববার দুপুর নাগাদ উপকূলে পৌঁছে যেতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই।
আজিজুর রহমান বলেন, টেকনাফের নীচ দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে ঘূর্ণিঝড়টির। পুরো কক্সবাজার জেলা থাকবে এই ঝড়ের আওতায়। প্রভাব পড়বে চট্টগ্রাম অঞ্চল জুড়ে।
গতকাল উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলেও গত রাতে ঘূর্ণিঝড়টি দিক পাল্টে উত্তর দিক অর্থাৎ বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আগাচ্ছে।
বিকেল নাগাদ উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিতে পারে অর্থাৎ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দিকে এগুবে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার ভোর ৬টায় ঘূর্ণিঝড় মোখা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।