বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘কয়দিন আগেও কত লাফালাফি। এখন লাফালাফি কমে এসেছে। সুর নিচের দিকে নেমে এসেছে। এখন বলেন, আমরা সংঘাত চাই না, আলাপ-আলোচনা চাই। অথচ কয়েক দিন আগেও বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর, হামলা করেছে।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের লড়াই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। অগ্নিসন্ত্রাস করবে তারা (আওয়ামী লীগ), দোষ দেবে আমাদের। তাই কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। সতর্ক থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে।’
সোমবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স নাকি বাড়তে শুরু করেছে। কী এমন জাদু তৈরি হলো? বাংলাদেশ থেকে যারা আমেরিকায় যান, তাদের বেশিরভাগই ঘরবাড়ি বিক্রি করে যান। কেউ রেমিট্যান্স পাঠান না। রেমিট্যান্স আসে মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এ টাকা পাচারের টাকা, চুরির টাকা।’
দলের কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব জেলায় দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সেদিনও অনেক জেলায় সভা করতে দেওয়া হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে, কেরানীগঞ্জে নিপুণ রায় চৌধুরীকে আহত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কত চক্রান্ত। নরসিংদীতে খায়রুল কবির খোকন ও শিরিন সুলতানার নামে মিথ্যা হত্যা মামলা করা হয়েছে। নিজেরা ষড়যন্ত্র করে, হত্যা করে, এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। গায়েবি মামলা- এটা তাদের নতুন ক্রিয়েশন।
তিনি বলেন, আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে এ লড়াই করছি। এ লড়াই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। পরিষ্কার দাবি হচ্ছে- সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- এ দেশের মানুষ এটা মনে করে না। এটাই বাস্তবতা। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি সরকারে থাকে তাহলে সেই নির্বাচন কখনই সুষ্ঠু হতে পারে না। ২০১৪ সালে দেখেছি, ২০১৮ সালে দেখেছি। আর নতুন করে দেখার কিছু নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান জীবনে তিনটি সফল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। সৈনিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি সফল। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুঠপাট হচ্ছিল, সেজন্য তিনি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বাতিল করে মুক্ত অর্থনীতি চালু করেছিলেন। এ আওয়ামী লীগ সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল করেছিল। আর জিয়াউর রহমান সুযোগ পেয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। সে কারণে রাজনীতিবিদ হিসেবে সফল। এ কারণে বর্তমান সরকার জিয়াউর রহমানকে ভয় পায়। তার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে কিন্তু কোনো লাভ হবে না।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশের ভোট চোরদের রুখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি করেছে। আপনাদেরও এখন থেকে সজাগ থাকতে হবে। কারা ভোট চোর, তাদের তালিকা করতে হবে। ওদের (ভোট চোর) অপকর্মের ছবি তুলে ফেসবুকের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে। বিএনপির অফিসে তা পাঠিয়ে দিতে হবে। বাকি কাজ আর চিন্তা করতে হবে না। আমরা বলে দিতে চাই, আগামীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আগামীতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহসম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।