নিয়োগ পেয়েছিলেন তিন বছরের জন্য। চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল ছয় মাসের মাথায়। তবে বছর পেরিয়েও তা হয়নি। এ অবস্থায় একবছরের মাথায় পদত্যাগ করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভুঁইয়া। অভিযোগ উঠেছে, ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিম এবং দুজন স্বতন্ত্র পরিচালকের ভূমিকার কারণে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
ডিএসই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ তারেক আমিন ডিএসইর এমডি হিসেবে যোগ দেওয়ার পর আইটি সংশ্লিষ্ট কাজের খরচ বড় অঙ্কে কমিয়ে দেন। এতে ডিএসইর অর্থ সাশ্রয় হলেও অসন্তুষ্ট হন সিটিও জিয়াউল করিম। তিনি কৌশলে স্বতন্ত্র পরিচালক এ কে এম মাসুদ এবং অন্য একজনকে এমডির বিপক্ষে নিয়ে যান।
জানা যায়, ডিএসই থেকে আইটি সংক্রান্ত ১৫০ কোটি টাকার কাজের মধ্যে ৭০ কোটি টাকার বেশি কাজই দেওয়া হয় ওয়ান ওয়ার্ল্ড ইনফোটেক নামে একটি কোম্পানিকে। তেমন পরিচিত না হওয়ার পরও এমন একটি কোম্পানিকে এত বড় অঙ্কের কাজ দেওয়া নিয়ে প্রশ্নে তোলেন তারিক আমিন।
সম্প্রতি ডিএসই যে ডেটা সেন্টার করেছে তার কাজও পায় ওই ওয়ান ওয়ার্ল্ড ইনফোটেক। এ কাজে ডেটা সেন্টারের জন্য খরচ নির্ধারিত হয় ৪২ কোটি টাকা। তবে এত টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারেক আমিন। বেশকিছু দুর্বলতাও খুঁজে বের করেন। পরে তার ভূমিকার কারণে ডেটা সেন্টারের পরিকল্পনায় কিছু সংশোধন করে খরচ ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা কমানো হয়।
এরপর ক্যাবল (তার) কেনার ক্ষেত্রেও মোটা অঙ্কের টাকার কাজ আটকে দেন তারিক আমিন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের কাছে যান। এরই মধ্যে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ইনফোটেকের মাধ্যমে ৯ কোটি টাকার ক্যাবল কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তবে এ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ফিরে আসেন তারিক আমিন এবং ক্যাবল কেনার ওই পরিকল্পনা বাতিল করেন। পরবর্তীসময়ে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে ক্যাবল কেনা হয়।
আইটি সংশ্লিষ্ট কাজে তারিক আমিন ভুঁইয়ার এমন ভূমিকার কারণে তার ওপর অসন্তুষ্ট হন সিটিও জিয়াউল করিম। এমনকি তাদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্বও সৃষ্টি হয়। তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি ডিএসইর বোর্ডসভায়ও ওঠে। দ্বন্দ্ব বাধার পর এ কে এম মাসুদ এবং আরেকজন স্বতন্ত্র পরিচালককে সুকৌশলে এমডির বিপক্ষে নিয়ে যান সিটিও।
এরপর ক্যাবল (তার) কেনার ক্ষেত্রেও মোটা অঙ্কের টাকার কাজ আটকে দেন তারিক আমিন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের কাছে যান। এরই মধ্যে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ইনফোটেকের মাধ্যমে ৯ কোটি টাকার ক্যাবল কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তবে এ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ফিরে আসেন তারিক আমিন এবং ক্যাবল কেনার ওই পরিকল্পনা বাতিল করেন। পরবর্তীসময়ে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে ক্যাবল কেনা হয়।
আইটি সংশ্লিষ্ট কাজে তারিক আমিন ভুঁইয়ার এমন ভূমিকার কারণে তার ওপর অসন্তুষ্ট হন সিটিও জিয়াউল করিম। এমনকি তাদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্বও সৃষ্টি হয়। তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি ডিএসইর বোর্ডসভায়ও ওঠে। দ্বন্দ্ব বাধার পর এ কে এম মাসুদ এবং আরেকজন স্বতন্ত্র পরিচালককে সুকৌশলে এমডির বিপক্ষে নিয়ে যান সিটিও।
গত বছরের ২৫ জুলাই এমডি পদে যোগ দেওয়া তারিক আমিনের প্রভিশনাল পিরিয়ড ছিল ছয় মাস। এরপর তার নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তবে ছয় মাসের জায়গায় এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও তার নিয়োগ চূড়ান্ত করেনি ডিএসই। মূলত দুজন স্বতন্ত্র পরিচালকের ভূমিকার কারণে তার নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়া আটকে থাকে বলে অভিযোগ।
এ নিয়ে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ওনার বিভিন্ন রকমের অসম্পন্নতা, লিমিটেশন ছিল, এ কারণেই হয়নি।
এর মধ্যেই সম্প্রতি ডিএসইর ৯৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেন তারিক আমিন। এ নিয়ে অভিযোগ ওঠে, নিয়ম না মেনে জিএম পদে পদোন্নতি দিয়েছেন এমডি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, এনআরসির (নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি) সুপারিশ ছাড়াই দেওয়া হয়েছে এই পদোন্নতি। যদিও চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পাওয়া বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জিএম পর্যায়ের পদোন্নতি স্থগিত করেন তারিক আমিন ভুঁইয়া।
এরপরও সিটিওর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক এমডির বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। তাদের ভূমিকার কারণে ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় এমডি তারেক আমিনকে তোপের মুখে পড়তে হয়। এমনকি পর্ষদ সভার এক পর্যায়ে তাকে সভা থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। এমডির অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় পর্ষদ সভার ওই অংশ।
এমন পরিস্থিতিতে পরের দিন ইমেইলে চেয়ারম্যান বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন ডিএসই এমডি। পদত্যাগপত্রে তিনি অক্টোবরের শেষে অর্থাৎ দুই মাস পর পদত্যাগ কার্যকর করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আর পদত্যাগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘যেভাবে তিনি চাচ্ছিলেন, সেভাব কাজ করতে পারছেন না’।
তবে এমডি পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার দুদিন পরই ২৫ আগস্ট তড়িঘড়ি পর্ষদ সভার আয়োজন করে ডিএসই। ওই সভায় এমডির পদত্যাগ কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুই মাসের বদলে তাকে সময় দেওয়া হয় দুই সপ্তাহ। এতে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর তার পদত্যাগ কার্যকর হবে। অবশ্য আগে থেকেই তারিক আমিন ভূঁইয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া স্বতন্ত্র পরিচালকরা ওইদিনই (২৫ আগস্ট) তার পদত্যাগ কার্যকরের দাবি জানান বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এমডির পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, তারিক আমিন ভুঁইয়া ভালো মানুষ এবং দক্ষ। আমরা তাকে পদত্যাগ করতে বলিনি। কেউ যদি পদত্যাগ করেন, সেখানে আমাদের কী করার আছে?
অভিযোগ উঠেছে ডিএসইর কিছু স্বতন্ত্র পরিচালকের ভূমিকার কারণে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, তারিক আমিন ভূঁইয়া ডিএসইর খরচ কমাতে ভূমিকা রেখেছেন। তাহলে পরিচালকরা কেন তার বিপক্ষে যাবেন?
দুই মাস পর পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তাকে মাত্র দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইউনুসুর রহমান বলেন, আইন মেনেই এটা করা হয়েছে। আইনে আছে স্থায়ী চাকরি হলে হলে তিন মাসের নোটিশ। আর অস্থায়ী হলে দুই মাসের নোটিশ। সবকিছু দেখেই এটা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো গ্যাপ নেই।
যোগাযোগ করা হলে তারিক আমিন ভুঁইয়া বলেন, ডিএসইর এমডি হিসেবে আমি সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। ডিএসইর খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল ডিএসইর একটি ভালো ব্যালান্সশিট তৈরি করা। সামনে ডিএসইর ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি হবে। এজন্য ডিএসইর একটা ভালো ব্যালান্সশিট দরকার। আমি সে লক্ষ্যেই কাজ করছিলাম। কিন্তু আমি যেভাবে চাচ্ছিলাম, সেভাবে কাজ করতে পারছিলাম না। এ কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
তিনি বলেন, আমি পদত্যাগপত্র জমা দিলেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যদি পদক্ষেপ নেয় এবং আমি যেভাবে চাচ্ছিলাম সেভাবে কাজ করার সুযোগ পায়, তাহলে ডিএসইর এমডি পদে আমার থেকে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
ডিএসইর সিটিও জিয়াউল করিম দেশের বাইরে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।