রওশন এরশাদ ইস্যুতে পক্ষ নেওয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা)। আজ বুধবার বিকেলে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে এই অব্যাহতি দেন। ইতিমধ্যে এ আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জাতীয় পার্টি।
মসিউর রহমান জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও দলের সাবেক মহাসচিব। দুই দিন আগে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার রেশ ধরেই মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
গত ৩০ আগস্ট জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ হঠাৎ করেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। তাতে রওশন নিজেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করে আট সদস্যের কমিটিও ঘোষণা করেন। এর পরদিনই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভা ডেকে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জাপার চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় মসিউর রহমানও অংশ নেন ও সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষরও করেন। পরে তাঁর নেতৃত্বেই সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত স্পিকারের কাছে পৌঁছানো হয়। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর হয়নি।
অব্যাহতির বিষয়ে মসিউর রহমান বলেন, ‘আমি একটি সত্য কথা বলায় তিনি (জি এম কাদের) আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তা করতেই পারেন। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, কাউকে যদি আমন্ত্রণ জানাতে হয়, সেটা চল্লিশা না বিয়ের অনুষ্ঠান—এটা তো আগে জানাতে হবে। রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে, সংসদীয় দলের সভা ডাকার আগে এমন অ্যাজেন্ডা কাউকে জানানো হয়নি। এটা লিগ্যাল হয়নি।’
জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে জাপার সংসদীয় দলের যে সভা হয়, জি এম কাদেরের নির্দেশে সেটি মসিউর রহমানই ডেকেছিলেন। সেখানে দীর্ঘ আলোচনার পর রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, সবাই তাতে স্বাক্ষরও করেন। সভায় দলের সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ অন্য সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জাপার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দলীয় সিদ্ধান্ত স্পিকারের কার্যালয়ে আটকে যাওয়ার পর দলের নেতাদের মধ্যে দোটানার সৃষ্টি হয়। তাঁরা ভাবছেন, রওশন এরশাদ সরকারের সমর্থন পেলে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বে টানাপোড়েন সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে সংসদীয় দলের সভার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেও অনেকে পিছটান দিচ্ছেন।
মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ছাড়া উপায় কী? কিছু কিছু সময়ে হার্ডলাইনে যেতে হয় ইচ্ছা না থাকলেও। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এটি করা হয়েছে।’