রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে অনেক ব্যাংক। পাশাপাশি বেড়েছে তারল্য সংকটও। এতে করে বেশিরভাগ ব্যাংক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পর্ষদের অনিয়ম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা আর আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের কারণেই এ দুরবস্থায় পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে এবার সরকারি ব্যাংকের পর্ষদ গঠন, চেয়ারম্যান, পরিচালক, তাদের প্রভাব, ঋণ বিতরণ পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে জানতে চেয়েছে ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার তথ্য ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিক সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে সংস্থাটির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় নেয়। এসময় তারা ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এসব প্রশ্ন তোলেন। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কারের তাগিদ দেয়।
আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছেরর, নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে আইএমএফের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের সমস্যা, সংস্কার, কার্যক্রম, পরিচালনা পর্ষদের গঠন, খেলাপ ঋণ আদায়ে সমঝোতা স্মারক চুক্তি, বিভিন্ন তদবির, ব্যাংক খাতের সংস্কার, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা, খাত ভিত্তিক আর্থিক ইন্ডিকেটরস, বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়মের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, ১০টি দুর্বল ব্যাংকের জন্য নেওয়া উদ্যোগ, ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট (এফএসএসপি) বাস্তবায়ন, ব্যাংক সুপারভিশন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন (সংশোধন) আইনসহ ৫টি অন্যতম আইনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
এছাড়া দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাবেক আমলাদের। সচিব এবং সিনিয়র সচিব পদ-মর্যাদার এসব আমলারা ব্যাংক পরিচালনায় কতটুকু ভূমিকা রাখছেন এবং কীভাবে রাখছেন তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিনিধি দল।
এর আগে বাংলাদেশ সফররত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর একে এম সাজেদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছের। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালন পদ্ধতি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ঋণ খেলাপি, ঋণ পুনঃতফসিল এবং ব্যাংকগুলোর বোর্ডের স্বাধীনতা বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা যায়।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আলোচনার শুরুতেই আমাদের বোর্ড মিটিংয়ের অ্যাজেন্ডাগুলো কীভাবে নির্ধারিত হয়, কী কী বিষয় স্থান পায়, কীভাবে আলোচনা হয় তা জানতে চায় আইএমএফ দল।
তিনি আরও জানান, প্রতিনিধি দল ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপি বৃদ্ধির কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ঋণ খেলাপি করতেও বেশকিছু কৌশল গ্রহণ করা হয় তার যৌক্তিকতা নিয়েও কথা বলেন তারা। এছাড়া ঋণ পুনঃতফসিল করতে বোর্ড মিটিংয়ে অ্যাজেন্ডা থাকে কিনা, কীভাবে পুনঃতফসিল করা হয়, রিশিডিউল করতে কোনো চাপ থাকে কিনা সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আর ব্যাংকের চেয়ারম্যানই সাবেক আমলা ও সচিব পর্যায়ের লোকজন সরকারের খুব ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তাদের ভূমিকা ও প্রভাব কতটা তা জানতে চান তারা।