বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এরমধ্যে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ হয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।’
সরকারদলীয় সংসদ মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা ১ হাজার ৮৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এরমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে পাওনা ৯০৫ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩৯৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় বিপুল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। তবে তদারকি জোরদার করে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়ার পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে ৬৪ কোটি ২২ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬৩ কোটি ৬১ লাখ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কাছে ৪৩ কোটি ৫৬ লাখ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ৩৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পাওনা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের।
বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া আদায়ে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া কমানোর জন্য পর্যায়ক্রমে সব গ্রাহককে প্রিপেইড/স্মার্ট মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫১ লাখ ৭ হাজার ৪৫২টি প্রি-পেইড/স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে আরও ২০ লাখ প্রি-পেইড/স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হবে।’
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলীর প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত তিন মেয়াদে এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ৯৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। যাতে গ্রিড, অফগ্রিড ও ক্যাপটিভসহ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশগুলো জ্বালানি সংকটে আছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতও এর বাইরে নয়। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার ও পরিকল্পিত লোডশেড করার মাধ্যমে সংকট উত্তরণের চেষ্টায় আছে।’
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্রিডে যুক্ত হওয়াসহ সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অচিরেই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।’