সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সব সরকার তাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য সংবিধান সংশোধন করেছে। সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির উদ্যোগে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল মিলনায়তনে ‘সংবিধানের ৫০ বছর ও আমাদের মৌলিক অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে এখন বাকস্বাধীনতা নেই বললেই চলে। বাকস্বাধীনতা যে আমাদের মৌলিক অধিকার, সেটা চিন্তাই করতে পারি না।
শাহদীন মালিক বলেন, এ দেশের জনগণের সংবিধানচর্চা খুবই সীমিত। সংবিধান হচ্ছে একটা দেশের সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করার আইন। সংবিধানচর্চা থাকলে সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে জনগণ জেনে যাবে। সংবিধানচর্চা হলে নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করবে। এতে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না।
এ সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এ পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় সংবিধান ছাপিয়েছে মাত্র ১৪ বার। সর্বশেষ ছাপা হয়েছে ২০১৬ সালে। তাও কেবল ৫০০ কপি। এখন তা ছাপা হয় না বললেই চলে। সরকার চায় না জনগণ সংবিধান জানুক বা বুঝুক। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। তারা উৎসাহী নয়। সংবিধানের একটা বিষয় নিয়ে খুব প্রচার হয়-সেটা হলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।
শাহদীন মালিক আরও বলেন, আমরা সব সময় একটা কথা উদ্ভটভাবে বলে থাকি-‘ক্ষমতাসীন দল’। প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। ক্ষমতাসীন হলো সব সময় জনগণ। একটা রাজনৈতিক দল কেবল সরকার গঠন করে। এতটুকু বলা যায়, এই সরকারটা হলো এই দলে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারি দল। নির্বাহী বিভাগে সে আছে এতটুকু। তারা কেবল সরকার গঠন করেছে। ক্ষমতা হলো জনগণের। আমাদের (জনগণের) বর্তমান অবস্থা এমন-মালিক তার জমিজমার দিকে খেয়াল না রাখলে যেমন তা হাতছাড়া হয়ে যায়, আমাদেরও তাই হয়েছে।
এ ছাড়া জনগণের মৌলিক অধিকার নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে যে সুরক্ষা পেতাম আজ তা-ও পাই না। এখন আমরা একটা বিষয় বুঝতে সক্ষম হয়েছি, সংবিধান বাদ দিলে বা থাকলে কিছু যায়-আসে না। দেশে এখন বাকস্বাধীনতা নেই বললেই চলে, যা আছে তার মধ্যেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অথচ আমেরিকার সংবিধানে ১৭৯১ সালে অর্থাৎ ২৩০ বছর আগে জনগণের বাকস্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আইন সংসদে পাশ করতে পারবে না-এমন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে ওই দেশ কোনো খারাপ অবস্থায় নেই। তারা বিশ্বের এখন শক্তিশালী রাষ্ট্র।
ড. শাহদীন মালিকের সভাপতিত্বে ও ড. শাহনাজ হুদার সঞ্চালনায় ওই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ড. আসিফ নজরুল, আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।