বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, সে বিষয়ে সমগ্র বিশ্ব আগ্রহী বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
স্থানীয় সময় সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের থমাস জেফারসন হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ব্লিঙ্কেন এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সোমবার (১০ এপ্রিল) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের ফলপ্রসূ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মিডিয়ার উপস্থিতিতে তাদের প্রাথমিক বক্তব্যে উভয় নেতা বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং গত ৫০ বছরের দৃঢ় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে আগামী ৫০ বছরের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ককে বিস্তৃত, গতিশীল ও বহুমুখী উল্লেখ করে ড. মোমেন এ সম্পর্ককে আরও উন্নত, বর্ধিত ও সুদৃঢ় করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ‘জয় বাংলা’ দিয়ে শেষ হওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি বাইডেনের প্রেরিত বার্তার জন্য ধন্যবাদ জানান।
বৈঠকে তারা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার ও বহুমুখীকরণ, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং নির্বাচনসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশে শ্রম খাত সংস্কারের চলমান এবং সম্পন্ন কাজ সম্পর্কে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে অবহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টাগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দুই দেশের মধ্যে চলমান যৌথ কর্মকাণ্ডের অগ্রগতির সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।
ড. মোমেন মার্কিন সরকারকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় উদার সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উদারভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা আব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পুনরায় অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
এসব বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে বহুমুখী, গতিশীল এবং বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু উপায়ে সম্পন্ন হবে। এ বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রেরিত উষ্ণ বার্তার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেরিত একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।
উক্ত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান, দূতালয় উপ-প্রধান মিস ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।