বৃহস্পতিবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
TableTalkUK
  1. ক্রাইম সিন
  2. খেলাধুলা
  3. জেলার খবর
  4. তথ্য-প্রযুক্তি
  5. প্রবাসের কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. ব্যাবসা-বাণিজ্য
  8. ভিডিও সংলাপ
  9. মিডিয়া
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সকল সংবাদ

কক্সবাজারে স্বামীকে জিম্মি করে ধর্ষণ, ফুঁসে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া

প্রতিবেদক
ukadmin
ডিসেম্বর ২৩, ২০২১ ১২:২৭ অপরাহ্ণ

রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিন যুবক। ওই ঘটনায় হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

যখন ওই নারীকে ছুঁড়ির ভয় দেখিয়ে টেনে সিএনজিতে তোলা হয় তখন তিনি চিৎকার করেন। আশেপাশে লোকজন ছিল। সেই অবস্থায় মুখ চেপে ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তিন যুবক। এগিয়ে আসেনি কেউ।

প্রকাশ্যে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকায় এমন ঘটনা ক্ষোভ আর নিন্দায় সোশ্যাল মিডিয়া ফুঁসে উঠেছে। অনেকের বক্তব্য এক বিন্দুতে এসে ঠেকছে আর তা হলো- ‘দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকার অনিরাপদ কেন? কক্সবাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন কেন?’

শুধু তাই নয়, এমন ঘটনা নাকি কক্সবাজারে প্রায় ঘটছে। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘কক্সবাজারে এগুলো কমন জিনিস। মেয়েটা মিডিয়ায় জানিয়েছে বলে আজকে এগুলো সবাই জানে। কিন্তু এরকম ঘটনা প্রতি নিয়তই ঘটে। আমার সামনে বাচ্চা একটা মেয়ের বুকে কয়েকটা ছেলেরা হাত দিয়েছিলো। অথচ মেয়েটার সামনে তার বাবা-মা ছিলো। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে পুরো কক্সবাজারবাসী আমার উপর চড়াও হয়েছে।’

চট্টগ্রামে বসবাসকারী একজন নারী ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যেই হোটেলে তাদের চেক ইন ছিল তাদেরও আওতায় আনা দরকার। ইনফরমেশন সেখান থেকেই গেছে। ধাক্কার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নাটক। আর কক্সবাজার এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য। এমন অনেক ঘটনা অহরহ ঘটছে সেখানে। লাইম লাইটের আড়ালে থাকে বলে উঠে আসছে না।’

একজন লিখেছেন, ‘দেশটা ধর্ষকের স্বর্গরাজ্য হয়ে গেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এভাবেই দেশকে গ্রাস করে ফেলে। ইয়াবা সম্রাট বদিরা যখন আমাদের আইনপ্রণেতা হন, তখন দেশের কাছে আমাদের আর কিইবা চাইবার আছে!’

অধিকাংশ নেটিজেনরাই মন্তব্য করছেন, ‘কোন দেশে আছি।’ অনেকেই বলছেন, ‘পর্যটন এলাকায় যদি ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে তাহলে মানুষ যাবে না। পর্যটন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।’

গণমাধ্যমের ‘সংবাদ’ লিঙ্ক নিজেদের ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেট নাগরিকেরা। 

একজন লিখেছেন, ‘গায়ে ধাক্কা দিয়ে ঝগড়া তারপর ছিনতাই এটা বহু বছর ধরে চলছে। এটা এখন ধর্ষণ পর্যন্ত চলে গেছে। এভবে চলার চেয়ে বন্ধ করে দেউল্যা হোক পর্যটন শিল্প।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘কক্সবাজার একটা ডাকাতির বাজার, মানুষ দেশের বাইরে যাবে না তো কি করবে। এদেশের পর্যটন সুবিধা বস্তির মানেরস।’

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমার স্বামী হাতে পায়ে ধরে মাফ চাইছে। কারণ আমার স্বামী অতটা চালাক চতুর না সরল সোজা মানুষ। আমার স্বামী কইছে ভাই আমরা অন্য জাইগা থিকা আইছি আমারে মাফ কইরা দেন। তার ৫ মিনিট পর একটি সিএনজি নিয়া আইসা তারা আমারে টাইনা উঠায়ে ফেলাইছে। তখন বাস থিকা অনেকগুলা লোক নামছে। দুইবার চিৎকার করছি। করার সময় একজন মুখ ধরছে আরেকজন হাত ধরছে, তারপরে মুখ বাইন্ধা ফেলছে। তারপর ভাঙ্গচোরা রাস্তা দিয়া চিপাচাপার মধ্য নিয়া গিয়ে তিনজন আমারে রেপ করছে।’

এরপর তাকে নেওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা।

ওই নারী আরো জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন তিনি। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়রি করার পরামর্শ দেয়। পরে তাদের র‌্যাব উদ্ধার করে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। যেহেতু ঘটনাটি স্পর্শকাতর তাই র‌্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে।’

বুধবার দিনগত রাত ২টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান র‌্যাব-১৫ এর কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান ওই নারীর বরাত দিয়ে বলেন, গত মঙ্গলবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন তারা (ওই নারী পর্যটক)। তারা শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে রুম নিয়ে ওঠেন। 

ওই হোটেল থেকে তারা বিকেলে যান লাবনী পয়েন্টের সৈকতে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক।

পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে ঝাউবীথির একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে আরেক দফা তাকে ওই তিন যুবক ‘সংঘবদ্ধ’ ধর্ষণ করে বলে ওই নারীর অভিযোগ। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে বলেও তিন যুবক তাকে হুমকি দেয় বলে জানানো হয়।

মেজর মেহেদী হাসান বলেন, এমন খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও গৃহবধূকে উদ্ধার করি। তদন্ত শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত তিনজনের মধ্যে দুজনকে শনাক্ত করেছি। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। ধর্ষণের শিকার নারী পর্যটক কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে জানান, ‘এ ঘটনা শুনে পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠে নেমেছে পুলিশের একটি দল। ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সর্বশেষ - ব্যাবসা-বাণিজ্য