এখনও নেপালের কারাগারে আটকে আছেন ৫ বাংলাদেশি। তারা দুবাই থেকে দেশে ফিরতে নেপালের হিমালয় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী সোনা বহন করলেও নেপালে ট্রানজিটের সময় তাদের আটক করে ওই দেশের কাস্টমস কর্মকর্তা। আটক হওয়ারা নেপালের কারাগারে মানবেতর ১১ দিন পার। সম্প্রতি একজন সরকারি কর্মকর্তাসহ ৮ বাংলাদেশিকে আটক করেছিল নেপাল কাস্টমস।
নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে দূতাবাস। একই সঙ্গে নেপালের কাস্টমসে গিয়েও তাদের খোঁজ নিচ্ছেন দূতাবাসের কর্মকর্তা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নেপালে একাধিক মন্ত্রীর কাছে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা নিতে অনুরোধও জানিয়েছেন। তবে নেপালের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিলেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
১৭ ডিসেম্বর দুবাই থেকে দেশে ফিরতে হিমালয় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে উঠেছিলেন বগুড়ার মো. আবু জিহাদ। নেপালের বেসরকারি বিমান সংস্থা হিমালয় এয়ারলাইন্স বিভিন্ন গন্তব্য থেকে কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ট্রানজিট হয়ে বাংলাদেশে যাত্রীদের নিয়ে আসে। দুবাই থেকে নেপাল আসার পর বিমানবন্দরে ট্রানজিট শেষে ফের ঢাকাগামী হিমালয়ের ফ্লাইটে উঠতে গেলে আবু জিহাদকে আটক করে নেপালের কাস্টমস কর্মকর্তারা। সাম্প্রতিক সময়ে হিমালয় এয়ারলাইন্সে ভ্রমণকারী একজন সরকারি কর্মকর্তাসহ ৮ বাংলাদেশিকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।
নেপালে আটক হন— মো. ইউনুস আলী (পাসপোর্ট নাম্বার BQ 0393288), মো. আবু জিহাদ (BT0212154), আশরাফুল ইসলাম (BN 0987871), সালমান আহমেদ (EF 0394741), জাহিদুল ইসলাম (A00100885), সোবহান তালুকদার (BT 0693599), তাওহিদুল তানভীর (A01241469), সরকারি কর্মকর্তা মো. মিরাজুল ইসলাম (OC 6009083)।
এই ৮ জনের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা মো. মিরাজুল ইসলাম, তাওহিদুল তানভীর, জাহিদুল ইসলাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে জরিমানা দিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন।
নেপালে আটক সালমান আহমেদের বাবা আব্দুল মতিন বাংলা বলেন, বিনা দোষে আমার ছেলে নেপালের জেলে আটকে আছে। নেপালে শীতের মধ্যে কারাগারে কষ্ট পাচ্ছে। সে তো অবৈধ কোনও কিছু সঙ্গে নেয়নি।
আবু জিহাদের স্ত্রী মৌসুমি বাংলা বলেন, আমার স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ, সেখানে তার কি পরিস্থিতি আমরা বুঝতে পারছি না। বিনা কারণে তাদের কেন জেলে থাকতে হবে। আমরা চাই সরকার দ্রুত তাদের মুক্তির ব্যবস্থা নিক।
২০১৯ সালের ২২ জুলাই ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট শুরু করে নেপালের বেসরকারি হিমালয় এয়ারলাইন্স। শুরুতে শুধু ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করলেও ধীরে ধীরে পরিধি বাড়ায় এয়ারলাইন্সটি। আবুধাবি, দোহা, দুবাই, দাম্মাম, রিয়াদ, মালয়েশিয়ায় থাকা বাংলাদেশিদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে এয়ারলাইন্সটি। সম্প্রতি সরাসরি ফ্লাইটের টিকিট না পেয়ে হিমালয় এয়ারলাইন্সে নেপালে ট্রানজিট হয়ে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকে বাংলাদেশ আসছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নেপালে আটক হওয়া বাংলাদেশিরা স্বর্ণ নিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত সোনার বার আনা যায়। এছাড়া সোনার অলংকার ১০০ গ্রাম পর্যন্ত শুল্কমুক্ত হিসেবে আনা যায়। বিভিন্ন দেশ ট্রানজিট হয়ে এই পরিমাণ সোনা পরিবহনে কখনও জটিলতায় পড়তে হয়নি কোনও বাংলাদেশি যাত্রীকে। তবে নেপালে নিয়ম ভিন্ন, দেশটিতে ৫০ গ্রামের বেশি সোনা আনা যায় না, ট্রানজিট যাত্রীদের তল্লাশি করে আটক করা হয়। হিমালয় এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশি যাত্রীরা নেপালে প্রবেশ না করলেও এ বিধানের আওতায় তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায় কাস্টম কর্মকর্তারা। তবে নেপালের আইন সম্পর্কে যাত্রীদের সঠিকভাবে তথ্য দেয়নি হিমালয় এয়ারলাইন্স।