র্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ছাড়া শুধু নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে সংলাপকে কেবল সময়ের অপচয় বলে মনে করে বিএনপি। তাই তারা অর্থহীন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ সম্পর্কে আজ বুধবার বিকেলে বিএনপি গণমাধ্যমকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। গত সোমবার ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।বিজ্ঞাপন
বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে অংশ নিয়ে মতামত দিয়েছিল। বিএনপিও নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিল। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনিভাবে ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার কারণে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরপর দুটো নির্বাচন কমিশনই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনোই স্বাধীনভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না বলে মনে বিএনপি। তাদের মতে, ২০১১ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বলবৎ করে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র বিকাশের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। জনগণ তার ভোটের অধিকার হারিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি বিশ্বাস করে, নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোনো নির্বাচন কমিশনই অনুষ্ঠান করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন পরিবর্তন করার ক্ষমতা তাঁর নেই। সে কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোনো ইতিবাচক ফল আনতে পারবে না। বিএনপি অর্থহীন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়ে বিপুল অর্থ পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফএআই) প্রতিবেদনের উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সাল বাদ দিয়ে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বিএনপি মনে করে, এই হিসাব সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে না। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সামগ্রিক চিত্র আরও ভয়াবহ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, এক দশক ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গুম এবং নাগরিক আন্দোলনের কর্মী গুমের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা ত্রাসের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘গুম’–এর ঘটনাগুলো সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের (ইউএনএইচআরসি) গুমসংক্রান্ত ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দ আকরাম হোসেন এবং লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ‘নিশিরাতে ভোটাধিকার হরণের’ তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে এবং ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।