রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কয়েকদিনের মধ্যে বাসায় নেওয়া হতে পারে। তিনি নিজেও এখন আর হাসপাতালে থাকতে চাইছেন না। সবিকছু ঠিক থাকলে চিকিৎসকরাও বাসায় রেখে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে চাইছেন বলেও জানা গেছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হওয়ায় গত ৯ জানুয়ারি তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট-সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবারই তাকে বাসায় নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি তার গৃহকর্মী ফাতেমা করোনাক্রান্ত হলে সে পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়। ফাতেমাকে ১৬ জানুয়ারি এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনা ব্লকের ৬০২৪ কেবিনে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেই খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় নেওয়া হবে- এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে ফাতেমার করোনা উপসর্গ এখন নেই বললেই চলে। তাই দুই-একদিনের মধ্যে তার করোনা নেগেটিভ আসতে পারে।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি ঘটায় তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান শিথি গত ১৬ জানুয়ারি লন্ডনে চলে গেছেন। এখন তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের পাশাপাশি বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও অন্যরা নিয়মিত তার খোঁজখবর রাখছেন। তবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিবার কিংবা দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে গত ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ারের চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি বিশেষ মেডিকেল টিম তার চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। ৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ছাড়াও অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
সূত্র জানায়, হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়ার শরীরের রক্তক্ষরণ কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এটা নিয়ে তার জীবন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছিলেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। বাইরে থেকে রক্ত ও অন্যান্য খনিজ দিয়ে তার চিকিৎসা চালানো হয়। পরে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তে বিদেশ থেকে ক্যামেরাযুক্ত ক্যাপসুল আনা হয়। এরপর তার ক্যাপসুল এন্ডোস্কপি করা হয়। এতে রক্তক্ষরণের উৎস হিসেবে তার ক্ষুদ্রান্তের নিচে একটি ক্ষত শনাক্ত করা সম্ভব হয়। চিকিৎসকদের প্রাণান্ত চেষ্টায় দীর্ঘ সময় ধরে এ এন্ডোস্কপির মাধ্যমে ব্যান্ড লাইগেশন করে সে ক্ষতটি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এতে রক্তক্ষরণ আপাতত বন্ধ হয়।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপাতত রক্তক্ষরণ বন্ধ হলেও তিনি ঝুঁকিমুক্ত হননি। যেকোনো সময় আবারও নতুন বা পুরনো উৎস থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। তাই দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া দরকার এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে লিভার ট্রান্সপ্লানটেশনই একমাত্র উপায় বলেই চিকিৎসকদের অভিমত।
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক দুর্বলতা এখনও অনেক। খাবারে অরুচি রয়েছে। কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। এরপরও তাকে বাসার পরিবেশে রাখা হলে অনেকটা সুস্থ হতে পারেন। এটা মানসিক ও মানবিক বিষয়।