‘আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমার ব্যবসা এখন বন্ধ। আমি বাসায় একাই থাকি। আমার এক ছেলে থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। আমার ভয়, আমি বাসায় মরে পড়ে থাকলে কেউ হয়তো খবর পাবে না।’ কথাগুলো বলে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর মোহাম্মদ আবু মহসিন খান। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী।
খবর পেয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ধানমণ্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন আবু মহসিন। রাত পৌনে ১০টার দিকে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আবু মহসিনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ও ঘটনাস্থলে পাওয়া নোট পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, প্রায় ৫ বছরের মত তিনি একা ছিলেন। ২০১৭ সালে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। অসুস্থ হওয়ার পর ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তার দেনা-পাওনা ছিল। দেনাদাররা টাকা না দিয়ে তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করেছেন। এসব কারণে তিনি খুব হতাশ ছিলেন। তবে পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে এখনও আমাদের কথা বলার সুযোগ হয়নি।
আত্মহত্যার আগে ফেসবুক লাইভে এসে বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলেন আবু মহসিন। সাম্প্রতিককালে কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে নিজের অসুস্থতা ও স্বজনদের প্রতি অভিমানের কথা বলেন।
ফেসবুক লাইভে ব্যবসায়ী মহসিন বলেন, ‘মা-বাবা তাঁদের উপার্জনের বেশির ভাগ সন্তানদের পেছনে খরচ করেন। প্রকৃত বাবারা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করেন, পরিবারকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিবার অনেক সময় বুঝতে চায় না। নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না। যাঁরা দেখছেন, তাঁদের সঙ্গে এটিই শেষ দেখা। সবাই ভালো থাকবেন। ’ এরপর কলেমা পড়তে পড়তে আত্মহত্যা করেন তিনি।
লাইভে ব্যবসায়ী আবু মহসিন স্বজনদের কাছে তাঁর মরদেহ মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে একটি কবরস্থানে দাফনের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘প্রত্যেকটি লোক আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমার বাবা, মা, ভাইয়েরা—প্রত্যেকটা লোক, এভরিওয়ান।’