শনিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
TableTalkUK
  1. ক্রাইম সিন
  2. খেলাধুলা
  3. জেলার খবর
  4. তথ্য-প্রযুক্তি
  5. প্রবাসের কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. ব্যাবসা-বাণিজ্য
  8. ভিডিও সংলাপ
  9. মিডিয়া
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সকল সংবাদ

সাজেদুল নিখোঁজের নির্মম বয়ান

প্রতিবেদক
ukadmin
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২ ৬:৩৬ অপরাহ্ণ

সাজেদুল ইসলাম সুমন। ঢাকা মহানগর ৩৮ (বর্তমান ২৫) নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় মানুষের কাছে ছিলেন পরিচিত মুখ। সব সময় ছুটে যেতেন মানুষের বিপদে আপদে। স্কুল বয়স থেকেই যুক্ত বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে। ২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সুমন। সেদিন তার সঙ্গে ছিলেন আরও পাঁচজন। নিখোঁজের কিছুক্ষণ পরেই খবর পায় পরিবার।এর পর থেকে আশপাশের থানা, ডিবি অফিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুমনের সন্ধান দিতে পারেননি কেউ। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় তবুও অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। সুমন বেঁচে আছে কিনা মরে গেছে- এই সংবাদও তার পরিবারের কারও কাছে নেই। প্রতিদিন স্বজনরা অপেক্ষায় থাকে এই বুঝি ফিরে আসবে। কিন্তু এখনো ফিরে আসেনি। সেদিন কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলো সমুন? কি সেই রহস্য? এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি সাজেদুল ইসলাম সুমনের পরিবারের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তারা জানিয়েছেন সেদিনকার বর্ণনা।

সুমনের মেজ বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, সেদিন রাত প্রায় সাড়ে আটটা। আমার আম্মার মোবাইলে বসুন্ধরা থেকে আমার খালা ফোন করে জানায়, সেখান থেকে আমার ভাই সুমনসহ তার আরও পাঁচ বন্ধুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে সময় আমার খালার বাসার কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছিলো। তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বিল্ডিংয়ে কাজ করা অনেক লোক ছিল। ওই ভবনের নির্মাণকর্মীরাই আমাদের এই ঘটনার বিবরণ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমার ভাইদের যারা তুলে নিয়ে যান, তারা অস্ত্র সজ্জিত ছিলেন এবং তাদের পরনে ছিল র?্যাবের পোশাক। তাদের সঙ্গে ছিল তিন ডাবল কেবিন ভ্যান আর একটা সাদা মাইক্রোবাস। প্রতিটি গাড়িতে র?্যাব-১ লেখা ছিল।

এ ছাড়া আমার ভাইয়ের আরও দুই বন্ধু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসেন। তারাও এসব ঘটনা দেখেছেন এবং আমাদের বিস্তারিত বলেছেন। ঘটনার খবর পেয়ে আমরা প্রথমে যাই র‌্যাব-১ অফিসে। কিন্তু তারা বারবার অস্বীকার করেন যে, এরকম কাউকে তারা তুলে আনেননি। পরে যাই র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে। তারাও কোনো খবর দিতে পারেননি। সেখান থেকে আমার পরিবার যায় ভাটারা থানায়। সেখান থেকে বলা হয়, বাসা যেহেতু তেজগাঁওয়ে তাহলে জিডি করতে হবে সংশ্লিষ্ট থানায়। কিন্তু তেজগাঁও থানায় গেলে তারা জানায় যেখানে ঘটনা সেখানে মামলা বা জিডি করতে হবে। পরে আমরা আবার যাই ভাটারা থানায়। কিন্তু র?্যাব তাদের তুলে নিয়ে গেছে বললে, থানায় কোনো মামলা বা জিডিও নেয়নি। এরপর থেকে আজও যেখানে ভাইয়ের কোনো খবর পাই সেখানেই ছুটে যাই। কিন্তু ভাইয়ের খোঁজ পাই না। আমার ভাইতো কোনোদিন কারও কোনো ক্ষতি করেনি। যে ছয়জনকে সেদিন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের কেউ আজও ফিরেনি।

তিনি বলেন, আমার বাবা নেই। সুমন গুম হওয়ার পর থেকে মা অসুস্থ হয়ে বিছানায়। খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ। ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমার মা অনেক যুদ্ধ করেছেন। বিছানায় থেকেও সব সময় সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করেন। এখন মাকে সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। তবে আমরা বিশ্বাস করি- আমার ভাই একদিন ঠিকই আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।    

সুমনের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে হাফসা ইসলাম রায়তা একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে আরওয়া ইসলামের বয়স ১০ বছর। বাবা নিখোঁজের সময় আরওয়ার বয়স ছিল ২ বছর। বাবার চেহারা তার মনে নেই। তবে ছবি দেখলে বলে এটা আমার বাবা। আরওয়া প্রায় সময় খুব জেদ দেখায়, মেজাজ খারাপ করে। সুমন নিখোঁজের পর থেকে কয়েক বছর আরওয়ার তেমন যত্ন নিতে পারেনি পরিবার। ওই সময়টা নিজের মতোই বেড়ে ওঠেছে। সবাই ছুটে বেড়িয়েছেন সুমনের সন্ধানে।

আর বড় মেয়ে রায়তা বাবা থাকা অবস্থায় সব সময় বাবা বাবা করতো। বাবা নিখোঁজের পর থেকে কেমন জানি হয়ে গেছে। কেমন যেনো আচরণ করে। ভালো কিছু বললেও মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে যায়। এসব বাবার শূন্যতা থেকেই হয়তো। বাবা নিখোঁজের সময় ওর বয়স ছিল নয় বছর। রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। এর পরে আর সেখানে পড়েনি। এখন সে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। প্রায় সময় বাবার ছবি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। কারও সঙ্গে তেমন বেশি কথা বলে না।

জানতে চাইলে সুমনের স্ত্রী নাসিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সুমন নিখোঁজের পর ওই সময়ের পরিবেশটা যে কি ছিল, কীভাবে দিন কাটিয়েছি, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানতো না। আমার বড় মেয়ে বাবার কাছ থেকে কিছুটা আদর পেলেও ছোট মেয়ে বাবার আদর কি সেটা পায়নি। বাবা বলে ডাক দিতে পারেনি। সত্যি কথা বলতে কী আমরা ভালো নেই। আমাদের চারপাশে কোনো কিছুর অভাব নেই। কিন্তু তারপরেও মনে হয় পুরোটাই শূন্যতা। আমি জানি না আমার স্বামী ফিরে আসবে কিনা- একথা বলেই চুপ হয়ে যান নাসিমা আক্তার।   
নিখোঁজের পর থেকে বিভিন্ন সভা- সমাবেশে বাবার সন্ধান চেয়ে কথা বলেছেন বড় মেয়ে রায়তা। কিন্তু এখন আর কারও সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে না সে। কথা হয় ছোট মেয়ে আরওয়ার সঙ্গে। সে জানায়, আমার বাবা আসবে। বাবা মালিবাগের বাসায় গেছে। আমাকে মেলায় নিয়ে যাবে। মেলায় আমি অনেক কিছু কিনবো আর ঘুরবো। ছোট পরিসরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল আরওয়ার ১০তম জন্মদিন। আরওয়া সেদিনও অপেক্ষায় ছিল বাবা আসবে তার জন্মদিনে। কিন্তু বাবা আসেনি। সে এখনো বিশ্বাস করে বাবা ঠিকই একদিন ফিরে আসবে। তাকে নিয়ে স্কুলে যাবে। চকলেট কিনে দিবে।

সর্বশেষ - বাংলাদেশ

আপনার জন্য নির্বাচিত