চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সহিংসতার ঘটনায় ৮ সন্ত্রাসীকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ চট্টগ্রাম মহানগরী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বান্দরবান সদর ও ঢাকার তেজকুনীপাড়া থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় র্যাব।
র্যাব জানায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে সহিংসতায় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও নাশকতা চালায়। ওই হামলায় নিহত হন ২ জন। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হন।
‘সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের দুইটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব সহিংসতা ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।’
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচারক কমান্ডার খন্দার আল মঈন বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার তত্ত্বাবধানে র্যাব-২, র্যাব-৭ ও র্যাব-১৫ অভিযান পরিচালনা করে। সোমবার রাতে র্যাব-১৫ এর অভিযানে বান্দরবান সদর থেকে সহিংসতায় অংশগ্রহণকারী নাসির উদ্দিনকে সাতকানিয়া থেকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অভিযান পরিচালনা করে মোরশেদ, কোরবান আলী ও ইসমাঈলকে সাতকানিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।
‘তাদের তথ্যমতে, সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে উদ্ধার করা হয় সহিংসতায় ব্যবহৃত ৩টি একনলা বন্দুক, ১টি দোনলা বন্দুক ও ১টি ওয়ান শুটারগান, অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র ও ৪২ রাউন্ড গোলাবারুদ। একই রাতে র্যাব-৭ এর অপর একটি অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে সহিংসতায় জড়িত জসিমকে গ্রেফতার করে। জসিমের দেওয়া তথ্যানুসারে ৬. মো. মিন্টুকে চান্দনাইশ থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার ভোরে র্যাব-২ এর অভিযানে ঢাকা মহানগরীর তেজকুনীপাড়া এলাকা থেকে সহিংসতার নেতৃত্ব প্রদানকারী মো. কায়েস এবং তার সহযোগী মো. নুরুল আবছারকে সাতকানিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সহিংসতার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছে।’
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত মো. কায়েস গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন। তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করতেন। তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে তার দলের সদস্যদের সরবরাহ করতেন। তার নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরও শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়। সহিংসতা পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় আত্মগোপন করেন। সহিংসতায় সাতকানিয়া থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি কায়েস। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার নাসির একটি কোম্পানির চট্টগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। তিনি ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী ছিলেন। পরবর্তীতে দেশে এসে ঢাকার শাহাবাগে ফুল বিক্রি করত। সহিংসতার পর বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে আত্মগোপন করে। সাতকানিয়া থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি তিনি।
গ্রেফতার আবছার ঢাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সে নির্বাচনের সময় কায়েসের নির্দেশে সাতকানিয়ার খাগরিয়াতে সহিংসতায় জড়ান। পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় এসে আত্মগোপন করেন। পাশাপাশি কায়েসকেও আত্মগোপনে থাকতে সহায়তা করেন। তার বিরুদ্ধে আগেও সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত সবার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় মামলা রয়েছে।