বৃহস্পতিবার , ১৭ মার্চ ২০২২ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
TableTalkUK
  1. ক্রাইম সিন
  2. খেলাধুলা
  3. জেলার খবর
  4. তথ্য-প্রযুক্তি
  5. প্রবাসের কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. ব্যাবসা-বাণিজ্য
  8. ভিডিও সংলাপ
  9. মিডিয়া
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সকল সংবাদ

চার খাতে দুর্নীতির ৩২ উৎস

প্রতিবেদক
ukadmin
মার্চ ১৭, ২০২২ ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ

দেশে দুর্নীতি দমনে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। আর এই সমন্বিত উদ্যোগকে শক্তিশালী করতে সরকারের প্রতিটি দপ্তর বা সংস্থার নিজ নিজ দায়িত্ব রয়েছে। কারণ সরকারি সংস্থাগুলোই সর্বাধিক রাষ্ট্রীয় সেবা দিয়ে থাকে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারি পরিসেবা প্রাপ্তিতে হয়রানি, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং দীর্ঘসূত্রতার অবসানে কার্যপদ্ধতির ইতিবাচক সংস্কারের পথকে সুগম করতে চায়। সমাজে যেসব কারণে দুর্নীতির উদ্ভব ঘটতে পারে সেগুলোও কমিশনের বিবেচনায় রাখতে হয়।

এজন্য দুদক সরকারের চারটি দপ্তরে দুর্নীতির ৩২টি উৎস খুঁজে বের করেছে। আর এসব নির্মূলে কমিশন থেকে ৩৯টি সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদক প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রতা প্রতিরোধে (স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি) উল্লেখযোগ্য সুপারিশ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সরকারের কাছে পেশ করে।

এবার করোনার কারণে দুই বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন একসঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে। কমিশনের এই বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী রোববার দুদকের ‘বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০ ও ২০২১’ রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশনকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

শুধু দুর্নীতি প্রতিরোধে সুপারিশ করলেই চলবে না। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তার সুষ্ঠু মনিটরিং থাকতে হবে।

দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) ও সাবেক জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিম দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অনুসন্ধান করে তা প্রতিরোধে সুপারিশমালা প্রণয়ন করা পুরোটাই পণ্ডশ্রম।

কারণ দুদক টিম জানতে পারছে যে, কীভাবে দুর্নীতি হচ্ছে, কারা দুর্নীতিতে জড়িত। এরপরও তাদের চিহ্নিত করে মামলা না দিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের সুপারিশ করলে তা কোনো কাজে আসবে না।

দুর্নীতি প্রতিরোধের সুপারিশের মাধ্যমে বড় কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রবণতা থাকে। এছাড়া এমনও নয় যে- দুদক এযাবৎকালে যেসব সুপারিশ করেছে তার সবগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে। কিংবা চিহ্নিত দুর্নীতির উৎস থেকে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে গেছে।

অথবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দুদকের সুপারিশ যথাযথভাবে পালন করছে। বরং কমিশন এ কাজের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। এমনিতেই দুদকে অনেক অনুসন্ধান ও তদন্তের মেয়াদ উত্তীর্ণ।

এরপর কর্মকর্তাদের দিয়ে এমন পণ্ডশ্রম করানোর কারণে তারা প্রকৃত অনুসন্ধান ও তদন্তে মনোযোগী হতে পারছে না। এতে করে অনুসন্ধান ও তদন্তে মেয়াদোত্তীর্ণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

প্রাতিষ্ঠানিক টিম : ২০০৮ সাল থেকে দুদক দেশে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু করে। কমিশন ২০১৭ সালে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে।

এগুলো হলো- তিতাস গ্যাস, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিলিভ এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান, কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যান্ড এক্সাইজ, আয়কর বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ, সাবরেজিস্ট্রার অফিসসহ রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, সমুদ্র ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকার ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) ও রাজস্ব (এসএ) শাখা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডাস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব দপ্তরে টিমগুলো কাজ করে থাকে।

আগের সুপারিশ ও বাস্তবায়ন : ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, গণপূর্ত অধিদপ্তর, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং বাংলাদেশ বিমান সংশ্লিষ্ট টিমগুলো এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে সুপারিশমালা পাঠিয়েছে।

ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে ওই সুপারিশমালা বাস্তবায়ন সংক্রান্তের জবাবের চিঠি পাওয়া গেছে।

এবার ৪ দপ্তরে ৩৯ সুপারিশ : ২০২১ সালে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ, সাবরেজিস্ট্রি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট টিমগুলো এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির উৎসগুলো চিহ্নিত করে সুপারিশমালা তৈরি করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল এবং কমিশন তা অনুমোদন করে।

কমিশন বিশ্বাস করে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য। যা অবশ্যই এসব দপ্তরে সরকারি পরিসেবা প্রদানে ঘুস, দুর্নীতি, হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতা হ্রাস করবে। এবার দুদক ৪টি দপ্তরে দুর্নীতির ৩২টি উৎস চিহ্নিত করেছে। আর এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন ৩৯টি সুপারিশ করেছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর : এ অধিদপ্তরে দুর্নীতির ১০টি উৎসের কথা বলা হয়েছে। বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোন কোম্পানি কোন ওষুধ তৈরি করছে, কোনটার স্ট্যান্ডার্ড কেমন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী হচ্ছে কিনা- এই বিষয়গুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সক্ষমতার যেমন ঘাটতি রয়েছে।

তেমনি অনিয়ম-দুর্নীতি ও হয়রানির অন্যতম উৎস বলেও এগুলো চিহ্নিত। অনেক নামসর্বস্ব কোম্পানি আছে যাদের পণ্য পরীক্ষায় মান উত্তীর্ণ হয় না। কিন্তু সেগুলোকেও মানসম্মত বলে সনদ দেওয়া হয়। ফলে বাজারে নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

এসব নিম্নমানের ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নকল-ভেজাল, মানহীন ওষুধ উৎপাদনের মূলে রয়েছে খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া ওষুধের কাঁচামাল। ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিই কেবল বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারে।

অনেক ওষুধ কোম্পানি চাহিদার তুলনায় অধিক কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে। ফার্মেসিগুলোতে নিষিদ্ধ চোরাইপথে আসা ওষুধ, নিম্নমানের ওষুধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।

ফার্মেসি পরিদর্শনের দায়িত্বে নিয়োজিতরা পরিদর্শন কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালনা করেন না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তার যোগসাজশে অনৈতিক সিন্ডিকেট এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

এ দপ্তরের দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক ৫টি সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো- লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, ফি গ্রহণসহ পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের আওতায় আনা। বিশেষজ্ঞ নিয়োগের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।

দোকানে লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট রাখা পর্যায়ক্রমে বাধ্যতামূলক করা। লাইসেন্স দেওয়ার আগে ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষা করা ও বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক ডাক্তারদের গিফট (দেশ-বিদেশ ভ্রমণ, গৃহ-আসবাব, মূল্যবান উপহার) প্রতিরোধ করা। একটি নীতিমালার ভিত্তিতে যথাসময়ে কোম্পানিগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ : এ খাতে দুর্নীতির ৬টি উৎসের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো- রেজিস্ট্রেশনের সময় যানবাহন পরীক্ষা করে রেজিস্ট্রেশন করার বিধান থাকলেও অর্থের বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া। অর্থের বিনিময়ে যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়া।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার সময়ক্ষেপণ করে অর্থ আদায় করা। একই কর্মচারীকে একাধিক ডেস্কের দায়িত্ব দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দালালদের দৌরাত্ম্যের সুযোগ সৃষ্টি করা। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সব তথ্য সংগ্রহের পর তা সরবরাহে দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়।

সর্বশেষ - ব্যাবসা-বাণিজ্য