দেখেশুনে দারুণ এক সূচনা দিলেন তামিম ইকবাল আর লিটন দাস। পরে সাকিব আল হাসান আর ইয়াসির আলি রাব্বি ঝড়ো জুটিতে দলকে গড়ে দিলেন বড় সংগ্রহের ভিত।
টপ অর্ডারের বুদ্ধিদীপ্ত আর হিসেবি ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দিবারাত্রির প্রথম ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে ৩১৪ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ জিততে হলে স্বাগতিকদের করতে হবে ৩১৫ রান।
সেঞ্চুরিয়ানের সুপার স্পোর্টস পার্কে এই ম্যাচে টসভাগ্য সহায় ছিল না টাইগারদের। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
লুঙ্গি এনগিদির করা প্রথম ওভারে কোনো ঝুঁকি নেননি তামিম ইকবাল। ফলে ওই ওভারে কোনো রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরের ওভারে ২ রান নেন লিটন দাস। ফলে প্রথম ২ ওভারে মাত্র ২ রান তুলতে পারে সফরকারীরা।
তবে এনগিদির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ছক্কা দিয়েই রানের খাতা খুলেন তামিম। আপার কাটে বল বাউন্ডারির ওপারে আছড়ে ফেলেন বাংলাদেশ দলপতি।
বিরূপ কন্ডিশনে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংই করেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলা উপমহাদেশের যে কোনো দলের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের কথা মাথায় রেখেই এগিয়েছেন তামিম আর লিটন।
সেট হওয়ার পর হঠাৎ মারমুখী চেহারায় হাজির লিটন। তার নিজস্ব ঢংয়ের ব্যাটিংয়ে ইনিংসের ১৯তম ওভারে প্রোটিয়া স্পিনার কেশভ মহারাজকে টানা তিন বলে ছক্কা আর দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন লিটন।
জুটিটা সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছিল। এমন সময়ে হঠাৎ আন্দেলো ফেহলুখায়োর একটি ডেলিভারি ক্রস করতে গিয়ে লাইন মিস করে বসেন তামিম। বল প্যাডে আঘাত হানলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
তামিম অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ৬৭ বলে ৩ চার আর ১ ছক্কায় তামিমের ৪১ রানের ইনিংসটি থেমেছে এলবিডব্লিউয়ে। ৯৫ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।
তবে তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের যে কোনো উইকেটে জুটির রেকর্ড গড়ে ফেলেন তামিম আর লিটন। তার আগে সেরা জুটিটি ছিল ২০১৭ সালে মুশফিকুর রহিম আর ইমরুল কায়েসের তৃতীয় উইকেটে ৯৩ রানের।
তামিম ফেরার পরই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন, ৬৬ বলে। তবে ৫০ ছোঁয়ার (৫ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায়) পরের বলেই কেশভ মহারাজের বলে বোল্ড হয়ে যান এই ওপেনার।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম (৯)। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে বল ভাসিয়ে দেন, হন মহারাজের দ্বিতীয় শিকার।
এরপর সাকিব আল হাসান আর ইয়াসির রাব্বির ঝড়ো এক জুটি। ৪১ বলেই যে জুটি পূরণ করে পঞ্চাশের ঘর। পরের পঞ্চাশের জন্য লেগেছে আরও কম বল। ৭৩ বলে সেঞ্চুরি জুটি পূরণ করেন সাকিব-রাব্বি।
চতুর্থ উইকেটে ৮২ বলে ১১৫ রানের জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশ এর আগে ওয়ানডেতে এত বড় জুটি তো গড়তে পারেইনি, দেখেনি এমন ঝড়ো ব্যাটিংও।
সাকিব আর রাব্বির ঝড়ো জুটিতেই মূলত চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে ৩ উইকেটে ২৩৯ রানে পৌঁছ যাওয়া টাইগাররা তিন বলের ব্যবধানে দুই মারকুটে ব্যাটারকেই হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে।
লুঙ্গি এনগিদির করা ইনিংসের ৪২তম ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউ হন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০তম ফিফটির মাইলফলক ছোঁয়া সাকিব। ৬৪ বলে ৭ চার আর ৩ ছক্কায় তিনি করেন ৭৭ রান।
পরের ওভারের প্রথম বলে কাগিসো রাবাদার গতিতে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরতি ক্যাচ হন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি পাওয়া রাব্বিও (৪৪ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ৫০)।
এরপর আফিফ হোসেন শুরুটা ভালো করলেও ১৩ বলে ১৭ রানের বেশি যেতে পারেননি। ১৭ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ২৫ রান করে আউট হন মাহমুদউল্লাহও। শেষদিকে মেহেদি হাসান মিরাজের ১২ বলে ২ ছক্কায় ১৯ রানে ৩১৪ পর্যন্ত গেছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কো জানসেন আর কেশভ মহারাজ নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।