শনিবার , ২৬ মার্চ ২০২২ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
TableTalkUK
  1. ক্রাইম সিন
  2. খেলাধুলা
  3. জেলার খবর
  4. তথ্য-প্রযুক্তি
  5. প্রবাসের কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. ব্যাবসা-বাণিজ্য
  8. ভিডিও সংলাপ
  9. মিডিয়া
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সকল সংবাদ

ছাপা বন্ধ ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা’ স্মার্ট এনআইডি

প্রতিবেদক
ukadmin
মার্চ ২৬, ২০২২ ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দখচিত স্মার্ট এনআইডি ছাপা বন্ধ রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেটভুক্ত সব বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে এ ধরনের কার্ড ইস্যু হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় কাজটি বন্ধ।

মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব হিসাবে গত ২০ মার্চ পর্যন্ত গেজেটেড বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৬ জন। তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্মার্ট কার্ড ও ডিজিটাল সনদ বিতরণ শুরু করতে চায় শিগগিরই। এ সংক্রান্ত কাজও চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এভাবে কার্ড বিতরণ শুরু করায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা এ বিষয়ে ইসির এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

ইসির বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দখচিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। তিনি যুগান্তরকে বলেন, তারা কোন অধিকারে এসব কার্ড দিচ্ছে তা আমরা জানি না। এ কার্ড ছাপা শুরুর আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়েছে কী না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘না’ সূচক উত্তর দেন।

নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব ও এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত কার্ড বিতরণ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি  বলেন, মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা সবাইকেই জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া নির্বাচন কমিশনের কাজ। কিন্তু তারা সেই কাজটি সঠিকভাবে করছে না। অনেক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল তথ্য রয়েছে। ওইসব ভুল সংশোধন না করে তারা কোন এখতিয়ারে জাতীয় পরিচয়পত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দ লিখছে-এটা তাদের কাজ নয়। কে মুক্তিযোদ্ধা, কে মুক্তিযোদ্ধা নয় তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের, ইসির না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা যুগান্তরকে বলেন, সব কিছু মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে কার্ডে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দ সংযোজন করি। বর্তমান কমিশন কী করবে সেটা তাদের বিষয়।

এ কার্ড বিতরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ  বলেন, এই মুহূর্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দখচিত জাতীয় পরিচয়পত্র ছাপার কাজ বন্ধ আছে। তবে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে কী না, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হবে কী না-তা নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের কমিশন বিদায়ের আগ মুহূর্তে ওইসব কার্ড প্রিন্ট করায় তা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার সময় পাওয়া যায়নি। অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশন মুক্তিযোদ্ধা কার্ড দিচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্রে শুধু ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দ লেখা থাকছে। এটা নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।

ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সিইসি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন বিদায়ের আগের দিন রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দখচিত স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ওই অনুষ্ঠানের জন্য দেশের বিশিষ্ট ৮২ জন নাগরিকের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রিন্ট করে ইসি সচিবালয়। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনই সরকারের বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী। ওই তালিকায় আছেন সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও মোহাম্মদ আবু হাফিজ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাজাহান ওমর বীর উত্তম ও গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও ছিলেন। অনুষ্ঠানে কয়েকজন সশরীরে হাজির হয়ে ওই কার্ড নেন। বাকিদের কার্ড বাসায় বাসায় পৌঁছে দিচ্ছেন ইসির কর্মকর্তারা। আরও জানা গেছে, সাবেক সিইসি কেএম নূরুল হুদার নির্দেশ অনুযায়ী ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার ওই তালিকা চূড়ান্ত করেন।

ইসি সূত্র আরও জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দ লেখার আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেনি ইসি সচিবালয়। এমনকি কোনো ধরনের সম্মতিও নেওয়া হয়নি। তবে এক চিঠিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধার ইংরেজি রূপ কী হবে তা জানতে চাওয়া হয়। ওই চিঠির জবাবও দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে বাংলায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ ও ইংরেজিতে ‘হিরোইক ফ্রিডম ফাইটার’ লেখার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের চিপের নিচে শুধু বাংলায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা হয়।

শিগগিরই স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু করতে চায় মন্ত্রণালয় : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়পত্র হিসাবে স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শিগগিরই শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে একটি সনদও দেওয়া হবে। এসব স্মার্ট কার্ড ও সনদে বেশ কিছু নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। ফলে সহজেই তা জাল করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা যত দিন বেঁচে থাকবেন, তত দিন ওই স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ থাকবে। কার্ডের সামনের অংশে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছবি, একটি চিপস ও দুই ধরনের কিউআর কোড থাকবে। এর মাধ্যমে সহজেই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ওই কার্ড দেখিয়ে নির্ধারিত হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা ও বেসরকারি হাসপাতালে অর্ধেক খরচে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন তারা। সরকারি যানবাহন বাস, ট্রেন ও স্টিমারে বিনা ভাড়ায় এবং বেসরকারি যানবাহনে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারবেন। এসব তথ্যও ওই কার্ডের পেছনের অংশে উল্লেখ থাকবে।

সূত্র আরও জানায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ২০ মার্চ পর্যন্ত গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক ৭৭ হাজার ৫৬৬ জন। তবে এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত কম-বেশি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যাদের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাদের অনেকের নাম বাদ পড়ছে। আবার অনেকের নাম নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। এ নিয়ে বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে। আদালতেও গড়াচ্ছে। এসব কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরি করা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক  বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি। এ নিয়ে যে কেউ অভিযোগ করতে পারে। এ অধিকার তার বা তাদের আছে। অভিযোগ করলে তদন্ত করে তা চূড়ান্ত করা হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

সর্বশেষ - ব্যাবসা-বাণিজ্য