বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী গ্রাম জিলবুনিয়া। ইটের সোলিং দেওয়া রাস্তার ধারে আবু গাজীর বাড়িতে একটি পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) রয়েছে। সকাল থেকেই এই পিএসএফের কাছে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। কারণ এই একটি পিএসএফ আংশিক ভালো আছে। এখানে ৫০ কলস পানি ঢালতে হয় পাঁচ কলস বিশুদ্ধ পানি তুলতে।
পিএসএফের টিউবওয়েলের মাথা নাই, পাশের পুকুর থেকে ৫০ কলস পানি ঢাইল্ল্যা দিয়া হেরপর ৫ কলস পানি নেওয়া লাগে। এই কষ্টের চেয়ে মরণ ভালো। গত বুধবার সকালে পিএসএফের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই কষ্টের কথা জানাচ্ছিলেন শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ জিলবুনিয়া গ্রামের খাদিজা বেগম
নাজমা বেগম নামে অপর এক নারী বলেন, সাপ্লাই নেই, টিউবওয়েল নেই, ট্যাংক নেই, কিছুই নেই। শুধু আছে পানির জন্য হাহাকার। এক কলস পানির জন্য রোজা রেখে আধা কিলোমিটার দূর থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি তিন ঘণ্টা। বর্ষার পানি সারা বছর ধরে রেখে খাওয়ার জন্য সরকারের কাছে একটি বড় ট্যাংকের দাবি জানান তিনি।
পার্শ্ববর্তী রায়েন্দা গ্রামের ফরিদ হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসে না। পুকুর ও বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। আশপাশের খালে লবণাক্ত পানি। বাধ্য হয়ে লবণ পানিতে গোসল, রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে হয়। এই পানি খেয়ে মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা ও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা খুব সমস্যায় আছি।
একই চিত্র দেখা যায় সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলায়। শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এক দিকে উপজেলাগুলোতে গভীর ও অগভীর নলকূপ বসে না, অপরদিকে পিএসএফগুলো নষ্ট ও শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দূষিত পানি পান করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।