চলছে পবিত্র রমজান মাস। সামনে আবার ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বেড়েছে ছিনতাই-চাঁদাবাজি। এ ধরনের ৫০টি স্পট খুঁজে পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসব স্পটে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজির পেছনে যারা মদদ দিচ্ছেন তাদেরও নজরে রাখা হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর রমনা, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও ওয়ারীসহ ১৫টি স্থানে অভিযান চালায় র্যাব। এসময় সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় ছিনতাইয়ে জড়িত আরও ২০ জনকে।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা জানান।
তিনি বলেন, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে চাঁদাবাজ-ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। এরা বিভিন্ন স্থানে সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনাস্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করছে।
কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে। র্যাব অভিযোগ পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় গতরাতে র্যাব-৩ এর কয়েকটি দল একযোগে অভিযান চালিয়ে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করে। এসময় চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায় করা নগদ এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৩০ টাকা, ৬০টি মোবাইল ও ৪৫টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, ওয়ারী থানাধীন কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজি শুরু হয় রাত ১২টার পর, যা চলে ভোর পর্যন্ত। পোল্ট্রি মুরগি বহনকারী কোনো গাড়ি এ বাজারে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির ধরন ও মুরগির পরিমাণ দেখে নির্ধারণ করা হতো চাঁদার পরিমাণ। যা জোরপূর্বক আদায় করা হয়। চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানি, মালামাল আনলোড ও বিক্রিতে দেওয়া হয় বাধা। প্রতি রাতে এখান থেকে আদায় করা হতো কয়েক লাখ টাকা।
রমনা থানার শান্তিনগরে মূলত রাস্তার ধারে ভাসমান দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। সকাল-বিকেলে দুই শিফটে আদায় করা হয় চাঁদা। এ কাজে চার-পাঁচজনের একটি গ্রুপ জড়িত। প্রতিদিন এখান থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়।
অপরদিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মালিবাগ রেলগেট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালভার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়েছে বলে জানায় র্যাব।
র্যাবের হাতে গ্রেফতাররা হলেন- আওয়াল (৪৫), আতিক (৩৫), আলাউদ্দিন (৪৫), ইসমাইল (৫৪), জুয়েল (৪৩), দুলাল (৪৫), বদির উদ্দিন বাবু (৫০), বাবুল (৫২), বাবুল হাওলাদার (৪৯), মোস্তফা হাওলাদার (৫০), সাহেব আলী (৫৪), তানভির (৪০), জালাল হোসেন (৩০), নিয়ামুল হোসেন (২৯), ময়নুল হোসেন (৪৫), মিন্টু খান (২৫), মেনু মিয়া (৩৮), রনি (৩১), রানা (২৪), শরীফ সরকার (৩৫), মহসীন (২৫), রনজিৎ দাস (৪৮), রাসেল শিকদার (২১), হারেজ (৪৩), বাদশা (২৯), আল আমীন সর্দার (২০), শহীদ (২৭), রাজু (৩৫), রফিক (২৫), রোমান (৪২), আকবর (২০), ইমন (১৯), রাব্বি (১৯), হৃদয় (১৯), মো. হোসেন (১৯), আল আমিন (২২), ইসমাইল হোসেন (২২), নাইমুল ইসলাম মিশু (২৫), নুরুল হক (২৫), রতন (২২), রাব্বি (১৯), শফিকুল ইসলাম (২৪), সাগর হোসেন শামীম (২০), উজ্জল মিয়া (২০), আক্কাছ (৫০), ইউছুফ (৩২), জাহিদ (৪৪), মুন্সি মুছা আহমেদ (৫২), রবিন মিয়া (৩২), সাগর (২৭), সুজন (৪৫), সোহাগ মৃধা (৩২) ও সোহেল সরকার (৩১)। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রত্যেক দোকানির কাছ থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, লেগুনাস্ট্যান্ডে তাদের কথা মতো কেউ চাঁদার টাকা না দিলে কোনো রুটে লেগুনা চলতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়। তখন লেগুনা চালকরা পেটের দায়ে বিনা প্রতিবাদে চাঁদা পরিশোধ করে। এসব চাঁদাবাজকে আইনের আওতায় আনায় নিরীহ দোকানদার ও লেগুনা চালকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাই-চাঁদাবাজদের মদদদাতা যারা তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর প্রায় ৫০ স্পটে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এছাড়া ঢাকার প্রবেশ পথেও গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হয়েছে।