সরকারের ভালো উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বয়স্ক ভাতা কার্যক্রম। প্রবীণদের সামাজিক আর্থিক নিরাপত্তার আওতায় বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। এটি সরকারের একটি আর্থিক কর্মসূচি। যে কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্ক, দুস্থ, কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের লোকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তবে গত ছয় বছরেও বাড়েনি বয়স্ক এই ভাতার পরিমাণ। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে বয়স্ক ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এরপর টানা ছয় বছর ধরে আর এই ভাতা বাড়ানো হয়নি। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরেও তা না বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
যদিও সাত বছর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা যখন একলাফে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়, তখন গরিব বয়স্ক নারী-পুরুষ এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের সরকার মাসে ৪০০ টাকা করে ভাতা দিতো। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে এই ভাতার পরিমাণ ১০০ বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করার সুপারিশ করেছিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এতে সায় দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ।
মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ভাতার পরিমাণ বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, কর্মসূচিটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে আনা। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। কারণ, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় সাত বছর আগের ৫০০ টাকার মূল্য এখন কমে ৩৫০ টাকায় নেমেছে।
ভাতার হার না বাড়লেও যোগ হবে নতুন ১১ লাখ ব্যক্তি
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সার্বিকভাবে বরাদ্দ বাড়বে। বাড়বে উপকারভোগীর সংখ্যাও। আগামী অর্থবছরে নতুন করে ১১ লাখ ব্যক্তিকে এই খাতের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু ভাতার পরিমাণ থাকছে ৫০০ টাকাই। নতুন অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ দেখানো হতে পারে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।
বর্তমানে দেশে ৫৭ লাখ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে ১১ লাখ বাড়ানো হলে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৬৮ লাখে উন্নীত হবে। এ ছাড়া বর্তমানে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পান আরও ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জন।
দুই বছর আগে ১১২ উপজেলায় এই ভাতা দেওয়া হতো। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাড়ানো হয় আরও ১৫০ উপজেলায়। অর্থাৎ বর্তমানে ২৬২টি উপজেলায় বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। নতুন অর্থ বছরে আরও ১০০ উপজেলায় এই কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। এতে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার আওতায় মোট উপজেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৬২। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো প্রতি মাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়ার এই কার্যক্রম শুরু হয়।
২০০৯-১০ অর্থ বছরে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২২ লাখ ৫০ হাজার জনে এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১০-১১ অর্থ বছরে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজার বৃদ্ধি করে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জনে উন্নীত করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩১ লাখ ৫০ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়।
বয়স্ক ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়
বয়স্ক ভাতা শুধুমাত্র অনলাইনেই আবেদন করা যাবে। অনলাইনে বয়স্ক ভাতার আবেদন করে প্রিন্ট করে স্থানীয় এলাকার চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা মাঠ কর্মী বা সমাজসেবা অধিদফতরে জমা দিলে তারা সমস্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে অনলাইনে এন্ট্রি করবে অতঃপর মোবাইলে নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা হারে অর্থ চলে আসবে।
বয়স্ক ভাতা পেতে কী কী লাগে
বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকতে হবে। বয়স পুরুষের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬২ বছর হতে হবে। সরকার কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত বয়স বিবেচনায় নিতে হবে। প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয় অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা হতে হবে । বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে। নগদ অ্যাকাউন্ট খোলা থাকতে হবে।
বয়স্ক ভাতা পাবেন না যারা
সরকারি কর্মচারী পেনশনভোগী হলে। দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারী হলে। অন্য কোনোভাবে নিয়মিত সরকারি অনুদান বা ভাতাপ্রাপ্ত হলে। কোনও বেসরকারি সংস্থা বা সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান বা ভাতাপ্রাপ্ত হলে।