ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটকে লোকারণ্য হয়ে আছে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি ও পর্যটনস্পটগুলো। ঈদের প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন পর্যটকের উপস্থিতি কয়েকগুণ বেড়েছে। ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে শনিবার (৭ মে) পর্যন্ত পর্যটন নগরীতে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক উপস্থিতির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময়ে প্রায় অর্ধহাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের আশাও করছেন তারা।
সৈকতে হারিয়ে যাওয়া শিশু ও বয়স্কদের খুঁজে পরিবারের কাছে ফেরাতে এবং তৃষ্ণার্থ পর্যটককে পানি পানের ব্যবস্থা করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
গ্রীষ্মের গরম পর্যটকদের ভোগাচ্ছে। তারপরও সাগরের হাওয়া খেতে লোকারণ্য সৈকতের বালিয়াড়ি। ভিড় রয়েছে হোটেল-মোটেল জোনের অলিগলি রাস্তাতেও। সবখানেই লোকজনের ভিড়। বাইবাস সড়ক, কলামতী ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবাল সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে।
টইটম্বুর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। মাঠে টহল দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, ঈদ, সাপ্তাহিক মিলিয়ে টানা ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন। কেউ এসেছেন ঈদের রাতে, আবার কেউ এসেছেন বুধবার সকাল-বিকেল ও রাতে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই তারকামানের হোটেলগুলো আগাম বুকিং হয়ে আছে। গেস্ট হাউজগুলোতে দেখেশুনে উঠছেন পর্যটকরা। পর্যটনকেন্দ্রিক সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট রয়েছে কক্সবাজারে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া বয়স্ক ও শিশুদের উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে কাজ করছে পর্যটন পুলিশ। বুধবার (৪ মে) একদিনেই ১০ জনের বেশি শিশুকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
গোসলকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষায় সর্তক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছেন জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।
চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দুই বছর করোনাভীতির কারণে বেড়ানো হয়নি। চাকরির কারণে অফিস-বাসা এই জীবনের বাইরে যাওয়া সম্ভব হয় না। এবার টানা ছুটি পেয়ে সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি।
হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, পর্যটন মৌসুমে কমবেশি পর্যটক নিত্যদিন কক্সবাজারে অবস্থান করেন। তবে রোজা শেষে টানা ছুটিতে অনেক পর্যটক এসেছে। করোনাকালের ক্ষতি কাটাতে সৈকত এভাবে পুরো মৌসুম ভর্তি থাকুক এটাই আমাদের কাম্য।
দিগন্ত ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ার মোহাম্মদ জানান, শুধু কক্সবাজার নয়, ইনানী-হিমছড়িসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটে পর্যটকের উপস্থিতি বেড়েছে।
কলাতলীর সি নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ‘গরমের কারণে যে পরিমাণ লোকসমাগম হবে না বলে মনে করেছিলাম, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি পর্যটক উপস্থিতি হয়েছে।’
সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, বুধবার সকাল থেকেই ঢেউয়ের সঙ্গে খেলছেন পর্যটকরা। আনন্দে আত্মহারা হয়ে অনেক সময় তারা বিপৎসীমার বাইরেও চলে যান। তাদের কিনারায় আনার পাশাপাশি নিরাপদ থাকতে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, বিনোদনের পাশাপাশি পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। সৈকতের ১১টি পয়েন্টে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা আছে। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ঘটনা রোধে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও নারী পুলিশ সদস্যরা সৈকতে ঘুরছেন। টহলে এলিট ফোর্স র্যাবও রয়েছে।