জমজমাট রাজধানীর কুরবানি পশুর হাট। শুক্রবার সকাল থেকে হাটগুলোয় জমে উঠেছে বিক্রি। সন্ধ্যার দিকে প্রায় অর্ধেক পশু বিক্রি হয়েছে-এমন অভিমত ছিল ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। হাটগুলোয় শুরুর দিকে বিক্রেতারা যেমন দাম হাঁকছিলেন। হাটগুলোর বিক্রি জমে ওঠার পর তারা দাম থেকে সরে এসেছেন। সে দামও গত বছরের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ বেশি। তবে হাটভেদে পশুর দরদামের পার্থক্য লক্ষ করা গেছে।
শুক্রবার সকালে হাজারীবাগ হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রি জমজমাট। কিছুক্ষণ পরপরই গরু কিনে নিয়ে বের হতে দেখা যায়। এর মধ্যে দুটি গরু ৬০ হাজার টাকা করে, একটি ৯০ হাজার টাকা, একটি এক লাখ ১৫ হাজার টাকা, একটি এক লাখ ২২ হাজার টাকা এবং একটি এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিতে দেখা যায়।
এই কেনাবেচায় বিক্রেতা খুশি হলেও ক্রেতাদের কিছু দুঃখ থাকছে। তারা বলছেন, গত বছর সাধারণ বাজারমূল্যের চেয়ে দাম অনেকাংশে বেশি। পাবনার সাঁথিয়া থেকে আসা আক্কাস আলী বলেন, আমার একটি গরু বিক্রি হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার টাকায়। এই দামে আমি খুশি।
ঢাকার মুগদা থেকে গরু কিনতে আফতাবনগর হাটে এসেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, হাটে ছোট থেকে অনেক বড় সব ধরনের গরু আছে। দামও অনেক বেশি চাচ্ছে। বাজেট অনুসারে গরু মেলানো কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবছরই আগে দাম বেশি থাকে, পরে কিছুটা কমে। এবার চিত্র কিছুটা ভিন্ন লক্ষ করা যাচ্ছে। এজন্য আজই (গতকাল) গরুটি কিনে ফেললাম।
শুক্রবার বিকালে আফতাবনগর হাটে কথা হয় পশু ব্যবসায়ী রাশিদুল হাসানের সঙ্গে। বলেন, ২৫ হাজার টাকা ভাড়ায় এক ট্রাকে ২টি ভারতীয় বোল্ডারসহ ৬টি গরু হাটে এনেছেন পাবনার বেড়া থেকে। তার প্রত্যেকটি গরুর ওজন ১৫-১৮ মণ। তিনি জানান, আড়াই লাখ টাকায় তার একটি গরু বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলোরও দামাদামি চলছে। আশা করছেন, ভালো দামে গরু বিক্রি করতে পারবেন।
রামপুরা থানা সংলগ্ন বসেছে মেরাদিয়া পশুর হাট। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতায় পূর্ণ পশুর হাট। এই হাটে ১৬টি গরু নিয়ে আসা সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর এলাকার ব্যবসায়ী কুতুব উদ্দিন জানান, ১৬ গরুর মধ্যে তার দুটি গরু সবচেয়ে বড়। ১৮ মাস ধরে তাদের পালছেন তিনি। দুটি গরুর ওজন প্রায় ৪০ মণ। গরুর দামাদামি চললেও এখনো প্রত্যাশিত দাম পাননি বলে বিক্রি করতে পারেননি।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় বসিলা হাট থেকে একটি গরু নিয়ে বের হলেন মোহাম্মদপুর জাকির হোসেন রোডের রুস্তম রহমান। ছোট্ট ট্রাকে করে তারা গরু নিয়ে যাচ্ছেন। দাম জানতে চাইলে বলেন, হাসিলসহ ৮৬ হাজার টাকা পড়েছে। শুরুর দিকে ওই হাটে এ ধরনের গরুর দাম ১ লাখের চেয়েও বেশি চাওয়া হচ্ছিল। বিক্রি জমে ওঠায় গরুর দাম কিছুটা ছেড়েছেন বিক্রেতারা। তবে বসিলা হাটের আরও কয়েকজন ক্রেতা জানান, বিক্রি জমছে সঠিক, কিন্তু দাম কমেনি। বিক্রেতারা উঁচু দামে তাদের গরু বিক্রি করছেন।
গাবতলী হাট ঘুরে জানা যায়, ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি হাটে। শুরু থেকে এই আকৃতির গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। এখনো ক্রেতাদের ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর চাহিদা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে।
পুরান ঢাকার হাজারীবাগের বাসিন্দা ও মাংস ব্যবসায়ী সাফায়েত হোসেন গাবতলী হাট থেকে সারা বছর গরু কেনেন। গরুর বিষয়ে ভালো ধারণা থাকায় তার পরিচিতজনদের গরু কিনতে সহযোগিতা করছেন। এ কারণে প্রতিদিনই হাজারীবাগ, বসিলা ও গাবতলী হাটে অবাধ বিচরণ রয়েছে তার।
এই তিনটি হাটের চিত্র যা দেখছি অন্যান্য বারের চেয়ে গরুর সংখ্যা কম। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একদিনের চেয়ে অন্যদিন গরুর দাম বাড়ছে। শেষ হাটে দাম আরও বাড়বে। কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। এ তিন হাটে ইতোমধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। শনিবারের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে অভিমত। আর কিছু গরু ব্যবসায়ী ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। প্রতিবছরই এটা হয়ে থাকে। তবে পশু সংকট দেখা দিলে সেসব গরু উঁচু দামে বিক্রি হতে পারে।
ডেমরার আমুলিয়া পশুর হাটে শুক্রবার সকাল থেকেই মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তবে জুমার নামাজের পর থেকেই বিক্রি জমে ওঠে। শুক্রবার বিকাল থেকে হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এই হাটে কথা হয় গরু কিনতে আসা ডাইং মাস্টার মো. সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারুলিয়া পশুর হাট থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ২টি দেশি ষাঁড় গরু কিনে ছোট পিকআপে করে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। এ হাট থেকে পছন্দের গরু কিনতে পেরে আমি খুশি।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে সারুলিয়া হাটে আসা পশু ব্যবসায়ী জয়নাল বেপারি বলেন, সারুলিয়া পশুর হাটে গত সোমবার এসেছি ৯০টি গরু নিয়ে, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ১১টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তবে হাটে দাম ভালো পাচ্ছি না। কারণ গতবারের তুলনায় গোখাদ্যের দাম বাড়তি থাকায় গরু কিনতে হয়েছে বেশি দামে।
আমুলিয়া মডেল টাউন হাটে দেখা গেছে, হাটটি অনেক খোলামেলা বলে এখানে পারিবারিকভাবে ক্রেতারা আসেন গাড়ি রাখার সুবিধার্থে। আমুলিয়া হাটে আসা কুষ্টিয়ার লালমোহন বেপারি বলেন, আমার তত্ত্বাবধানে ১৫ বেপারি ১৬০টি গরু এ হাটে নিয়ে এসেছি। আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কুরবানির যোগ্য ছোট থেকে মাঝারি ও বড় সাইজের গরু নিয়ে এসেছি হাটে। ইতোমধ্যে ১৫টি গরু বিক্রি করতে পারলেও শনিবার রাতের মধ্যে আশা করি বিক্রি হবে সব পশু।