জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, দেশে এখন গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। মানুষের অধিকার বলেও কিছু নেই। শাসক আর প্রশাসক ছাড়া মাঝখানে আর কেউ নেই, কিছু নেই। বলা যেতে পারে দেশে এখন কার্যত রাজতন্ত্র চলছে। কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছাড়াই দেশ চলছে।
বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টিকে ভাবতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই নানা জায়গা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টিতে যোগদান করছেন। অনেক রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে নির্বাচনি জোট গঠনের কথাও ভাবছে। ঠিক এমন সময় তাকে (রওশন এরশাদ) ঘিরে একটি চক্র দলকে নিয়ে অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছেন।
জিএম কাদের বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখেন-তারা জাতীয় পার্টির কেউ নয়। তাকে (রওশন এরশাদ) সামনে রেখে দলছুট, নিষ্ক্রিয়, সুবিধাভোগী, যারা এক সময় দলে ছিলেন, নানান সময়ে দল ছেড়ে গেছেন কিংবা দল থেকে বহিষ্কৃৃত হয়েছেন-এমন কয়েকজন গুরুত্বহীন ব্যক্তি মিলে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছেন বা পাকানোর চেষ্টা করছেন। এ রকম যে একটা কিছু হতে পারে-আমরা তা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলাম। তাই আগেভাগেই সজাগ ও সতর্ক থেকে সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
অতীতে জাতীয় পার্টি যতবার ভাঙনের শিকার হয়েছে বা ব্রাকেটবন্দি হয়েছে-তার বেশিরভাগই শাসক দলের ইন্ধনে হয়েছে-এমন অভিযোগ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের। এবারও কি মনে হচ্ছে রওশন এরশাদ এবং তার অনুসারীদের এই তৎপরতার সঙ্গে শাসক দলের ইন্ধন রয়েছে-জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, পার্টি ভাঙা বা পার্টিকে সংকটে ফেলার ইন্ধন নানা মহল থেকে দেওয়া হতে পারে। তবে শাসক দলের পক্ষ থেকে ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে-সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এটা বলা কঠিন। তবে এটা ঠিক, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রতিপক্ষ হিসেবে জাতীয় পার্টিকে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছে।
রওশন এরশাদের কাউন্সিল আহবান এবং এর পরপরই তাকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি কি ইতিবাচক বলে মনে হয় আপনার কাছে-এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, দীর্ঘ প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় তিনি অসুস্থ। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। এ কারণে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিনি সংসদে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। পাশাপাশি তিনি অসুস্থ থাকায় একটি চক্র তাকে ভুল বুঝিয়ে দলের ভেতরে অনৈক্য সৃষ্টিরও পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। বিষয় দুটি আমলে নিয়েই মূলত জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল তাকে সরিয়ে ওই পদে আমাকে বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়টি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে আমরা আশা করছি। এর আগে হয়তো তিনি (স্পিকার) প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলতে পারেন।
তিনি বলেন, প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশন এরশাদ আমাদের পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা বা না করা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের এখতিয়ার। জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মনে হয়েছে, তিনি কারও কথায় বা চাপে কাউন্সিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন। অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাইরের কিছু মানুষ হয়তো রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তারা রওশন এরশাদকে অপব্যবহার করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় পার্টির সংসদীয় দল জাতীয় পার্টির ঐক্য রক্ষা এবং পার্টিকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগের অর্থাৎ দশম জাতীয় সংসদে রওশন এরশাদকে সরিয়ে পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করার প্রস্তাব লিখিতভাবে স্পিকারকে দিয়েছিল জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল। কিন্তু ওই প্রস্তাব তখন গ্রহণ করা হয়নি। এবারও কী তাই ঘটবে-এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ওই সময় এমনটা ঘটেছিল কিনা আমার মনে পড়ছে না। তবে এমনটা হয়ে থাকলে তা সঠিক হয়নি।