দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিমের হাতে ঘুসের ১০ হাজার টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদর। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ওই ঘটনায় দুদকের করা মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন। এরই মধ্যে অভিযোগকারী সহকারী শিক্ষিকা তাসলিমা আকতার ও মামলার তদন্তকারী দুদকের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় ঘুসের অভিযোগটি অসঙ্গত, ভিত্তিহীন, হয়রানিমূলক, মিথ্যা ও তুচ্ছ উল্লেখ করে উল্টো অভিযোগকারী তাসলিমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস।
এ নিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করে আইনি সুরাহা চেয়েছেন তাসলিমা। তিনি বর্তমানে ফটিকছড়ি ফরহাদাবাদ নূর কাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছেন। এদিকে বিচারাধীন বিষয়ে মামলার রায় না হওয়ার আগে অভিযোগকারী সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসের পদক্ষেপটি আইনসিদ্ধ নয় বলে দাবি করেছেন দুদক আইনজীবী।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলার বেড়াজালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন তাসলিমা। স্কুলটি দুর্গম এলাকায় ও যাতায়াত কষ্টসাধ্য হওয়ায় ওই স্কুল থেকে বদলির আবেদন করেছিলেন তিনি। তাসলিমা সম্ভাব্য তিনটি স্কুলের নাম উল্লেখ করে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। কিন্তু পরবর্তীসময়ে বদলির বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদর তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুস দাবি করেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সহকারী শিক্ষিকা দুদকে লিখিত অভিযোগ দেন। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফাঁদ তৈরি করে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ঘুসের ১০ হাজার টাকাসহ আজিমেল কদরকে গ্রেফতার করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১।
ওই সময়ের উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে আজিমেল কদরকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ এবং সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ করা হয়। পরে ওই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন। দুদকের মামলায় সহকারী শিক্ষিকা তাসলিমা আকতার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
অন্যদিকে দুদকের মামলায় আজিমেল কদর জামিনে বের হওয়ার পর তাসলিমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস। ওই বিভাগীয় মামলায় ঘুস নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানের সই করা এক আদেশে আজিমেল কদরকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।