দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে কানাডার হাইকমিশনারকে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক বৈঠকে নেতারা এ কথা জানান।
আগামী নির্বাচন ও অর্থনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলাসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
দুপুর দেড়টা থেকে শুরু করে ওই বৈঠক চলে ৩টা পর্যন্ত। সূত্র জানায়, বৈঠকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের কথা তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা।
তারা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন করেছে একতরফাভাবে, যেখানে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনের দিন ভোট হয়নি, হয়েছে আগের রাতে। গত দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ দাবিতে আন্দোলন করছে দলগুলো।
এছাড়া বিএনপি নেতারা, গুম-খুন-মামলা-নির্যাতনের একটি চিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে চলমান বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা দেওয়া, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, গ্রেফতারের কথাও অবহিত করেন তারা।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কানাডা মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, জীবনের নিরাপত্তা, আইনের শাসনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। কানাডাসহ কয়েকটা দেশ এগুলোতে দৃঢ় অবস্থান নেয় সব সময়। তাদের ওয়েবসাইটে গেলে দেখতে পারবেন, বাংলাদেশ সরকারকে বাইলেটারেলি বলে আসছে যে, এখানে মানবাধিকার ইস্যু লঙ্ঘন হচ্ছে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট স্বাভাবিকভাবে আমাদের যে মানবাধিকার পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা ইত্যাদি সব বিষয়ে আলাপ হয়েছে সার্বিকভাবে। আমরা ভালো আলোচনা করেছি।’
মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘কানাডার পক্ষ থেকে কনসার্ন (উদ্বেগ) তো আছেই। বাংলাদেশের জনগণের যে রকম কনসার্ন আছে, সারা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশগুলো, মাল্টিলেটারেল বডি এবং মানবাধিকার সংস্থা সবার যেমন কনসার্ন আছে, তাদেরও তো কনসার্ন আছে। বিশেষ করে মানবাধিকারের ওপর তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি, গণতন্ত্রের ওপর তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি।’
নির্বাচন ইস্যুতে কী বলেছেন জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা তো ভেতরে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা এখানে বলতে পারব না। এটা আপনারা বুঝতেই পারছেন।’
কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, প্রথমত, আমাদের ২ বিলিয়নের ওপরে রপ্তানি হয়। ২০০৩ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে শুল্কমুক্ত সুবিধা কানাডা পেয়েছিল। সেটা বিএনপির সময়ে নেগুসিয়েট হয়েছিলো। যার কারণে আজকে এত রপ্তানির ডেসটেনি হয়েছে কানাডা। আমি তখন বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম, কানাডার সঙ্গে এ নেগুসিয়েট করেছিলাম। আমাদের রপ্তানির বড় একটা জায়গা কানাডা। আমদানির জন্যও বাংলাদেশের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কানাডা। আমাদের মূল কিছু জিনিস যেমন- গম, ডাল, ডাল জাতীয় খাদ্যদ্রব্য যার একটা বড় অংশ কানাডা থেকে আমাদের দেশে আসে।
বৈঠকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছাড়াও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।