বঙ্গবাজার মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ক্ষমতাসীনদের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার দুপুরে ১২ দলীয় লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রকৃত নিরপেক্ষ তদন্ত যদি হয় তাহলে সম্ভাবনা আছে এটা বেরিয়ে আসার যে, এটা সম্পূর্ণণভাবে আওয়ামী লীগের দ্বারাই হয়েছে। বহু ধরে আওয়ামী লীগের কিছূ অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক বঙ্গবাজারকে দখলের জন্য চেষ্টা করছিলেন, কাজ করছিলেন। আমরা যেটা চেয়েছি যে, একটা নিরপেক্ষ তদন্ত।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার একদিন পরে সেখানে বহুতল ভবনের আলোচনা শুরু হয়ে গেছে- এটাকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ইয়েস- আমি সেই কথাটাই বললাম। আমি তো বলেছি, প্রকৃত ও নিরপেক্ষ তদন্ত যদি হয় তাহলে বেরিয়ে আসবে যারা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী তারাই এটার সঙ্গে জড়িত এবং আমরা… এই পর্যন্ত বলতে চাই।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য ধরে আপনি (সাংবাদিক) প্রশ্ন করার সময়ে অন্যরা (সাংবাদিকরা) যেভাবে হাসতেছিলে। আমার মনে হয় রোজার দিনে মানুষকে হাসানোর জন্য উনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। আর কিছু না।
তিনি বলেন, তারা বলেছিল রানা প্লাজা (সাভারে গার্মেন্টস কারখানার ভবন) ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল। সেই একই কথা এখানে ওরা বলছে…।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) আজিমপুরে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বঙ্গবাজার ও আশপাশের বিপনি বিতানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির ‘হাত’ আছে কিনা তা তদন্তের প্রয়োজন অনুভব করছেন।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে না দাঁড়িয়ে, বিএনপি ও ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। বঙ্গবাজারসহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কিনা, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এই ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা, তা আমরা খতিয়ে দেখছি এবং তা তদন্ত করা দরকার।
শুক্রবার বেলা ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা আদায়ে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আপনারা জানেন, একটা গণআন্দোলন একইভাবে সমগতিতে সমধারায় চলতে পারে না। তার আপস অ্যান্ড ডাউনস, তার তীব্রতা এবং বিভিন্ন পশ্চাদপদতা থাকে সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আজকে আমি এটুকু বলতে চাই, আমাদের সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রয়াস নিশ্চয়ই আমাদেরকে আগামীতে জয়যুক্ত করবে, কামিয়াব করবে এই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী করে তুলবে।
বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়ে গেল এই সরকারের দায়-দায়িত্ব বলতে কিছু নেই। উল্টো রিমান্ডে নিয়ে সেই দরিদ্র নির্বিকার-নিশ্চুপ হকাদেরকে নানারকমভাবে হয়রানি করছে। আমরা এই সভায় এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
‘সরকার একতরফা নির্বাচনের পথেই হাটছে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকারের লক্ষ্য তারা আগের কায়দায় নির্বাচন দেখিয়ে আবার ক্ষমতায় যাবে, সেভাবে তারা পরিকল্পনা করেছে। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, তারা (সরকার) সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যথেষ্ট আগ্রহী।
সেই কারণে গতকালও প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার মুখ দিয়ে বেরিয়েছে যে, যদি সবার অংশগ্রহণ না থাকে তাহলে সেই নির্বাচনের লেজিটিমেসি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। সুতরাং রিয়েলিটি ইজ দিস যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হলে এবং আমাদের বিরোধী জোট, আমরা যারা আছি তারা যদি অংশগ্রহণ না করি, তাহলে সেই নির্বাচনের লেজিটিমেসি থাকবে না। দেয়ার ইজ এ রিয়েলিটি। আমরা মনে করি, সরকার আগের মতো একতরফা নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য তারা জাতিসংঘের প্রস্তাব (নির্বাচনে সহযোগিতার প্রস্তাব) রিজেক্ট করেছে।
বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপির আবু তাহের, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম ও জাগপার ইকবাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।