গাজীপুর শহরের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে বন্দি অবস্থায় ২৮ জনকে উদ্ধার করেছে র্যাব। চিকিৎসার নামে তাদের বন্দি করে রাখা উদ্ধার হয়েছিল। মঙ্গলবার দিনভর অভিযান শেষে শহরের ভুরুলিয়া এলাকার ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত নিরাময় পুর্নবাসন কেন্দ্র ’ থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
এ সময় ওই নিরাময় কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কর্মচারীকে আটক করা হয়।
সন্ধ্যায় অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ওই নিরাময় কেন্দ্রে ভোর থেকে অভিযান চালানো হয়। নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে এটি মূল একটি বন্দি ও নির্যাতনশালা। ২০ জনের অনুমোদন থাকলেও ভর্তি রাখা হতো অনেক বেশি মাদকাসক্তদের। বেড ছাড়াই ৪-৫টি কক্ষের মেঝেতে রাখা হতো গাদাগাদি করে। ঠিক মত দেওয়া হতো না খাবার। করানো হতো রান্নাবান্না-ধোয়ামোছার কাজ।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসার নামে চালানো হতো শারীরিক-মানসিক ও যৌন নির্যাতন। নির্যাতনের জন্য আলাদা কক্ষ পাওয়া গেছে। সেখানে নির্যাতন সামগ্রীও পাওয়া গেছে। ভর্তি রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা থাকলেও করা হতো না। কোনো ডাক্তারও নেই সেখানে। কয়েকজন মাদকসেবীকে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিকও মাদকাসক্ত। অভিযানের সময় নিরাময় কেন্দ্রে ৪২০ পিচ ইয়াবা পাওয়া গেছে। অথচ এখানে মাদক থাকার কথা নয়। কেন্দ্রে আসার পর একজন মাদকাসক্তকে ২৮ দিনের বেশি রাখার নিয়ম নেই। অথচ কেউ কেউ এক থকে তিন বছর ধরে এখানে আছে। নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে এটি চলে আসছিল।
অভিযানের পর উদ্ধারকৃতদের স্বজন বা অন্য নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তাদের মধ্যে সাতজন নির্যাতন অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, একটি প্রভাবশারী মহলের ছত্রছায়ায় এই নিরাময় কেন্দ্রটি পরিচালানা করা হত। জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে হাতে রেখে চলত নিময়ের নামে টাকা আদায়। ছয় বছর আগে নির্যাতনে এই কেন্দ্রে একজনের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি একজন তরুণ চলচ্চিত্র অভিনেতাকে এ নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আফরোজা নাজনীন বাধন অভিনেতাকে শরীর টিপে দেওয়াসহ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন। রাজি না হলে শারীরিক নির্যাতন করেন। জানতে পেরে অভিনেতার স্বজনরা বিষয়টি র্যাবকে জানায়।
উদ্ধারের পর একাধিক যুবক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এখানো চিকিৎসার নামে বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের মাদক সেবনের সুযোগ দেওয়া হতো। নিরাপদে মাদক পাওয়ায় তারা নিরাময় কেন্দ্র ছেড়ে যেতে চাইতো না। মালিক বাধন প্রায়ই রাতে নিরাময় কেন্দ্রে থাকতেন। কোনো যুবককে পছন্দ হলে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শরীরসহ স্পর্শকাতর স্থান ম্যাসেজ বা কখনো যৌন সম্পর্কে বাধ্য করাতেন। রাজি না হলে শারীরিক নির্যাতন চালাতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী অভিভাবক বলেন, তার স্কুল পড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে সাত মাস আগে এই কেন্দ্রে ভর্তি করেন। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু ছেলের চিকিৎসার কোনো উন্নতি হয়নি। ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হতো না।