বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ও ৭ চোরাকারবারি নেপালে আটক
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অবৈধভাবে ৪০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে দেশে ফেরার সময় ঢাকা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তাসহ আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সাত সদস্যকে আটক করেছে নেপাল কাস্টমস পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, এই স্বর্ণ চোরাচালান চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নেপালের কাঠমান্ডুকে নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে।
স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে নেপালের কাস্টমস যারা আটক হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের এসআই মিরাজুল ইসলাম। অন্যরা হলেন, সালমান আহমেদ, মো. ইউনুস আলী, জাহিদুল ইসলাম, তৌহিদুল তানভীর, সোবহান তালুকদার ও আশরাফুল ইসলাম।
স্বর্ণ পাচারের এ ঘটনা তদন্তের জন্য নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামালকে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠির সূত্র ধরেই এই ঘটনা চাউর হয়।
এই চিঠির সূত্র ধরে জানা যায়, এ সময় ৩৩ লাখ রুপি (২৪ লাখ টাকা) জরিমানা দিয়ে নেপাল কাস্টমস থেকে ছাড়া পেয়েছেন এসআই মিরাজুল ইসলাম।
ঢাকা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন শাখার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এসআই মিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
রাষ্ট্রদূতের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, নেপালের হিমালয়ান এয়ারলাইন্সে দুবাই থেকে কাঠমান্ডু হয়ে ঢাকায় আসার পথে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকায় ঘোরাফেরার সময় নেপালের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। তখন আট জন বাংলাদেশিকে আটক করে তারা।
নেপাল কাস্টমস বলছে, তাদের প্রত্যেকের কাছে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মোট ৪০ ভরি স্বর্ণ ছিল। নিয়মানুযায়ী একজন বিমানযাত্রী স্বর্ণালংকার, স্বর্ণবারসহ মোট ২০ ভরি পর্যন্ত স্বর্ণ বহন করতে করতে পারেন।
নেপাল কাস্টমস বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিরা শক্তিশালী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত। এই চক্রের সঙ্গে নেপালের কেউ জড়িত কি না, তা যাচাই করতে তারা আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পাশাপাশি তারা জানিয়েছেন, স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করাও তাদের আটক করার অন্যতম কারণ। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাগেজ রুল অনেক বেশি নমনীয়। পাচারকারীরা এই নিয়মের সুযোগ নিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ দূতাবাসকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঠমান্ডুতে আটক ওই ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা নিরীহ বাংলাদেশিদের মাধ্যমেও স্বর্ণ পাচার করে।আটক আটজনের মধ্যে দুজন জানিয়েছেন, তারা ওই চক্রের অনুরোধে স্বর্ণ বহন করছিলেন। স্বর্ণ বহন করার বিনিময়ে তারা প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ পাবেন বলে প্রলোভন দেখিয়েছিল। সেই লোভের বশবর্তী হয়ে তারা স্বর্ণ বহন করেছেন।
নেপাল কাস্টমসে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস নেপালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, আটক ব্যক্তিরা ট্রানজিট যাত্রী, তারা নেপালের আইনের আওতাধীন নয়। তাদের মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূত নিজে নেপালের অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেন।
ওই সময় নেপালের অর্থমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের জানান, আটক ব্যক্তিদের তিনজন মুক্তির জন্য নেপালের কর্তৃপক্ষের কাছে ৭৬ লাখ নেপালি রুপি পরিশোধ করেছেন।
মিরাজুলসহ তিন জনকে ছাড়িয়ে নিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুবাই থেকে জরিমানার ৭৬ লাখ নেপালি রুপি নিয়ে কাঠমান্ডুতে হাজির হন তারা। এরপর ৮ জানুয়ারি তারা মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। ততক্ষণে পানি অনেক গড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশের জন্য ভীষণ বিব্রতকর বিষয়টি নেপাল সরকারের উচ্চপর্যায়েও তোলপাড় তুলে। কারণ, দুবাইয়ের স্বর্ণ চোরাকারবারিরা কাঠমান্ডুকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে, যাকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছে দেশটির সরকার। নেপালি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি জোরদার করছে।