প্রায় চার যুগ আগে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সমরাস্ত্র কিনতে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২ কোটি ২০ লাখ ডলার) দিয়েছিল ইরান। কিন্তু ইসলামী বিপ্লবে ইরানি নেতা মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি সরকারের পতনের পর আর তার চালান পাঠায়নি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। তবে এতদিন পর রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের মধ্যে হঠাৎ করেই ইরানের সেই পাওনা মেটাতে তোড়জোড় শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। বুধবার (১৬ মার্চ) ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর রয়টার্সের।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা ইরানের ঐতিহাসিক ৪০ কোটি পাউন্ড পরিশোধের উপায় খুঁজছেন। তবে প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করেননি তিনি।
এদিন ইরানে বন্দি ব্রিটিশ-ইরানি নাগরিক নাজানিন জাঘারি-র্যাটক্লিফের মুক্তির বিষয়ে স্কাই নিউজের সঙ্গে কথা বলছিলেন লিজ ট্রাস। ২০২১ সালে ইরানের রাষ্ট্রায়াত্ত সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, যুক্তরাজ্য সরকার তেহরানের ওই পাওনা মিটিয়ে দিলেই নাজানিনকে মুক্তি দেওয়া হবে।
নাজানিন ছাড়া আনুশেহ আশুরি এবং মোরাদ তেহবাজ নামে আরও দুই ব্রিটিশ নাগরিক বর্তমানে ইরানে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। তাদের মুক্তির বিষয়েও আলোচনা চালাচ্ছে ব্রিটিশ সরকার।
লিজ ট্রাসের কাছে এদিন প্রশ্ন করা হয়েছিল, নাজানিন শিগগির লন্ডনে ফিরতে পারবেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার নাজানিনের মুক্তি ও ইরানের দেনা পরিশোধের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা স্পষ্ট করেছি যে, এটি বৈধ দেনা, যা ইরান আমাদের কাছে পায়। আমরা এটি পরিশোধের উপায় খুঁজছি। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের একটি দল ইরানে রয়েছে জানালেও এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
ইরানি কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, দেশটির সাবেক পশ্চিমাপন্থি শাসক রেজা শাহ ১ হাজার ৭৫০টি চিফটেইন ট্যাংক কিনতে যুক্তরাজ্যকে ৪০ কোটি পাউন্ডের সমান অর্থ দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আর সেসব ট্যাংক পাঠায়নি ব্রিটিশ সরকার।
যদিও দুই দেশের কর্তৃপক্ষই বলেছে, পাওনা পরিশোধের সঙ্গে ব্রিটিশ নাগরিকদের মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রুশ তেল-গ্যাস আমদানিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ইরানের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুক্তরাজ্য। সে জন্যই পুরোনো পাওনা মেটাতে হঠাৎ তোড়জোড় শুরু করেছে ব্রিটিশ সরকার।