বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ বিষয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে ইউএনও প্রভাবশালী হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ওই কলেজছাত্রী ও তার পরিবার।
অভিযুক্ত মনজুর হোসেন বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদনের পাশাপাশি মনজুর হোসেনকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ছাত্রী। আবেদনের পর এ ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কায় আছি, যেহেতু তিনি ইউএনও আর আমি একজন ছাত্রী। যিনি তদন্ত করছেন তিনিও একজন বিসিএস ক্যাডার আর যার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তিনিও বিসিএস ক্যাডার। এত ডকুমেন্ট দেওয়ার পরেও কলেজছাত্রী হিসেবে আসলে আমার বক্তব্য ও অভিযোগ কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটাই এখন প্রশ্ন। তিনি ইউএনও হিসেবে সুযোগ পাবে বা পাচ্ছে, কিন্তু আমি কতটুকু পাবো সেটাই বিষয়
মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিভাস সরকার নুপুর বলেন, ‘লোকমুখে জানতে পেরেছি, সরকারি গাড়ি বাজারের পাশে রেখে ইউএনও নিয়মিত ওই ছাত্রীর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতেন। তবে আমি নিজে কখনও দেখিনি, শুনেছি। যে কোনও ব্যক্তি অপরাধ করলে তার বিচার হওয়া স্বাভাবিক, এটা সবাই চাইবে। কেউ অপরাধ করলে সে শাস্তি পাক, এটাই আমরা চাই।’
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সংস্থাটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। প্রশাসনের একজন কর্তা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওঠা গোটা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের শামিল। অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং ভিকটিম যাতে ন্যায়বিচার পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এরআগেও তার (ইউএনও) অনৈতিক সম্পর্কের খবর জেনে তাকে মাঠ প্রশাসন থেকে সরানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বাসাইল থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে ইউএনওর পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ইউএনও ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইলের সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। বিয়ের কথা বলে সেখানে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন তিনি। এরপর ওই ছাত্রী ও মনজুর হোসেন টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজের পাশে পাওয়ার হাউজের পেছনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে দুই মাস থাকার পর বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি চান ভুক্তভোগী ছাত্রী। তখন ইউএনও জানায়, ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে বিয়ে করবেন। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মনজুর হোসেনের পরিচিত জোবায়েত হোসেন ও সরকারি গাড়ির চালক বুলবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ভিসায় ভারত যায়। ওই বছরের ৫ অক্টোবর তারা ভারত থেকে দেশে ফিরেন। ভারতে অবস্থানকালে তারা অধিকাংশ সময় নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছেন। ভারতের হায়দরাবাদে হাসপাতালের কাছে একটি বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে তারা দুই জনেই চিকিৎসা নেন। পরে ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তারা আবার দেখা করে এবং মনজুর হোসেন পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বিয়ে না করায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ভুক্তভোগী। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই ছাত্রীকে আইনি সেবা দিচ্ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন