কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার পরিধি বাড়ানো এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হবে। চীনের বাজারে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ১০০ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ রপ্তানি করে প্রায় ৭০ কোটি ডলার। আর আমদানি করে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য। বাণিজ্যের ওই বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধার পরিধি বাড়ানোর অনুরোধ জানাবে।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ১৪০ কোটি ডলার। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চীনকে দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারার পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ওই প্রকল্পগুলোতে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা চীনের। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে এসব সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা হবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত চীনের প্রকল্পগুলোর মধ্যে আটটি প্রকল্পের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। ওই আট প্রকল্পের ব্যয় ৭৮০ কোটি ডলার হলেও এ পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও বাংলাদেশের দিক থেকে আলোচনায় আসবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের আলোচ্য সূচির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। এ ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’ এ বিষয়ে গতকাল পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার জন্য মিয়ানমারকে চীন যাতে চাপ দেয়, আমরা সে অনুরোধও করব।’
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে ঘিরে তাইওয়ান–চীনের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ২ আগস্ট ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরের পর থেকেই চীন বন্ধুপ্রতিম অনেক দেশের মতো বাংলাদেশকেও ‘এক চীন’ নীতি নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ গত বৃহস্পতিবার এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী বলে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষিত চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ (গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ-জিএসআই) এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের (গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ-জিডিআই) মতো বিষয়গুলো আলোচনায় আনতে পারেন।
তবে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আমরা এখন কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের মোকাবিলার মতো বিষয়গুলো নিয়ে বেশি ব্যস্ত। ফলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে জিডিআই, জিএসআইয়ের মতো বিষয়গুলো এলেও বিভিন্ন পরাশক্তির মধ্যে যে বিষয়গুলোতে বৈরিতা চলছে, তাতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের তেমন একটা আগ্রহ নেই।’
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার ধারণা, আলোচনায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক জোট আইপিইএফের (ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফোরাম) বিষয়টিও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুলতে পারেন। কারণ, গত মে মাসে আইপিইএফ ঘোষণার পরপরই ঢাকা ও বেইজিংয়ে বসে চীনের কূটনীতিকেরা বাংলাদেশকে ওই জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, বেশ কয়েক বছর পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ। সফরটি সংক্ষিপ্ত হলেও দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়গুলো যেমন গুরুত্ব পাবে, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের ঘটনাপ্রবাহও আলোচনায় আসবে।