তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, গাইবান্ধা উপনির্বাচনে মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা লিখিত দিয়েছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, নির্বাচনে কোনো গন্ডগোল হয়নি। কিন্তু পাঁচ শ কিলোমিটার দূরে বসে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নির্বাচন কমিশন পুরো উপনির্বাচন বাতিল করেছে। এ কারণে জনগণই বলছে কমিশনের এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে নির্বাচন সব সময় নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হয়। তাদের সিদ্ধান্তই সবার ওপরে, সেখানে সরকারের ভূমিকা নেই। তাই বিএনপিসহ যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকারসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারের ফর্মুলা দেয়, সেটিরও কোনো যৌক্তিকতা নেই।
নির্বাচন বাতিলের সিদ্ধান্তে গাইবান্ধার সাধারণ মানুষ অবাক হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বা মন্ত্রী হিসেবে নয়, সেখানকার ভোটার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টক শোতে আমি অনেক কিছু দেখেছি ও শুনেছি। তা থেকে আমাদের মনে হচ্ছে, সাধারণ জনগণ তাদের এই সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছে। কারণ, নির্বাচনী এলাকার কোথাও কোনো ধরনের গন্ডগোল হয়নি। এ ছাড়া কোনো পোলিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ ছিল না।’
এ সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের লিখিত প্রতিবেদনের কপি উপস্থাপন করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যেখানে নির্বাচন কমিশন এই কথাগুলো বলছে, সেখানে আমার কাছে ৯৮টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার লিখিত প্রতিবেদন আছে যে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। কোনো ধরনের কোনো গন্ডগোল হয়নি। বরং রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশে ভোট বন্ধ করেছে।’
ঢাকা থেকে পাঁচ শ কিলোমিটার দূরের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার রেজল্যুশন ও ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘সেটি (গাইবান্ধার নির্বাচনী এলাকা) একটি দুর্গম এলাকা। সেখান থেকে সিসি ক্যামেরা কতটুকু স্বচ্ছ বা কারেক্ট ফুটেজ দিচ্ছিল, সেটি বড় প্রশ্ন। বোদ্ধাজনেরা বলছেন, সেখানে একজন বৃদ্ধ লোককে আরেকজন হাঁটতে সাহায্য করছেন। পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জন্য কেউ চা এনেছে, পানি এনেছে। কেউ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেছেন, আবার ঢুকেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, সেখানে কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটারের বাইরে লোক দেখতে পেয়েছেন তাঁরা। ইন্টারনেট রেজল্যুশন যেখানে আপডাউন করে, সেখানে পাঁচ শ কিলোমিটার দূরে বসে ঠিকভাবে মানুষ চিহ্নিত করা সম্ভব কি না, প্রশ্ন রেখেছেন বোদ্ধাজনেরা।’
৫৩টি কেন্দ্রের বিষয়ে অভিযোগে পুরো নির্বাচন বাতিল হওয়া যৌক্তিক কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে ৫৩টি কেন্দ্রে তারা এ ধরনের ঘটনা দেখেছে। ৫৩টি কেন্দ্র মানে ১৪৫টি কেন্দ্রের এক–তৃতীয়াংশ। আমাদের প্রার্থীও প্রশ্ন রেখেছেন, সেসব কেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা বাতিল হতে পারত, বাকি কেন্দ্রের ভোট কেন বাতিল হলো। কমিশনের মতে, অন্য কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, নির্বাচন কমিশনেরও কোনো আপত্তি নেই। তাহলে অন্য কেন্দ্রের ভোট কেন স্থগিত হলো, মানুষের কাছে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।’