ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আকস্মিক সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। বুধবার তিনি ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হন। সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা। তিনি মার্কিন কংগ্রেসেও ভাষণ দেবেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর প্রথমবারের মতো জেলেনস্কি বিদেশ সফর করছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। তারা বলছে, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের ফল ভালো হবে না।
এক টুইট বার্তায় জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনের ‘প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা জোরদার’ করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। সফরকালে তিনি জো বাইডেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করবেন। বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, নির্মম যুদ্ধে উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ হতাহত ও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে এটা ‘খুবই স্পর্শকাতর’ সফর। এমন এক সময় জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন, যখন দেশটির আইনপ্রণেতারা ইউক্রেনকে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন নিয়ে ভোটাভুটি করবেন। এ ছাড়া মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করছে।
মঙ্গলবার যুদ্ধকবলিত দোনেৎস্কের বাখমুত অঞ্চল পরিদর্শন করেন জেলেনস্কি। সেখান থেকে তিনি পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে যান। পোল্যান্ডের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জানায়, বুধবার ভোরে জেলেনস্কি সীমান্ত পার হয়ে দেশটিতে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি একটি ট্রেন স্টেশনে যান। সকালে তিনি পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহর পর্জেমিসলে পৌঁছান। শহরটিতে যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত বহু ইউক্রেনীয় অবস্থান করছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ারি এক বিবৃতিতে জানান, জেলেনস্কির সফর নিয়ে আগ্রহী বাইডেন। কংগ্রেসে তাঁর (জেলেনস্কি) ভাষণ দেওয়ার বিষয়টি ইউক্রেনের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের ইঙ্গিত। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার কথা জেলেনস্কির।
গত ১১ ডিসেম্বর জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন জেলেনস্কি। তখনই তাঁরা সফর নিয়ে আলোচনা করেন। তিন দিন পর আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানায় যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার জেলেনস্কি এ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তবে তা নিশ্চিত করা হয় গত রোববার। মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সামনে ভাষণ দেওয়ার আয়োজন করেন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তিনি দুই কক্ষের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান। পেলোসি বলেন, ইউক্রেনের জন্য লড়াইয়ের অর্থ হলো, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই।
চলতি সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিবেশী বেলারুশ সফর করেন। তাঁর সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন জেলেনস্কি।
ক্রেমলিনের হুঁশিয়ারি
কিয়েভকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত অস্ত্র সরবরাহ যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়াবে বলে হুঁশিয়ার করেছে ক্রেমলিন। এটা ইউক্রেনের জন্য ‘ভালো কিছু নিয়ে আসবে না’ বলে জানিয়েছে তারা। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের উদ্ধৃতি দিয়ে আলজাজিরা জানায়, (যুক্তরাষ্ট্রের) অস্ত্র সরবরাহ চলছে। ক্রমেই এর পরিমাণ বাড়ছে। এটা অবশ্যই যুদ্ধের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
এদিকে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইউক্রেনে সব লক্ষ্য পূরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। মস্কোতে প্রতিরক্ষা প্রধানদের সঙ্গে বছরের সমাপনী বৈঠকে তিনি এ অঙ্গীকার করেন। এ সময় তিনি রুশ সেনা ও কমান্ডারদের ‘নায়ক’ বলে সম্বোধন করেন। ইউক্রেন অভিযানে সামরিক বাহিনীকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথাও জানান পুতিন। তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে আর্থিক কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এ সময় পুতিন শিগগির আরও ড্রোন ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘স্যাটান-২’ মজুতের নির্দেশ দেন।
আবারও সাইরেন
বুধবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে বিমান হামলার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়। স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে অনুরোধ করে প্রশাসন। গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া।