আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার হওয়া বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এবার অবাধ, সুষ্ঠু, পক্ষপাতহীন, অংশগ্রহণমূলক ও ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে। হাঁটুভাঙা বিএনপির কথা শুনবেন না। জনগণের সঙ্গে কথা বলুন।’
শুক্রবার (১৯ মে) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক শান্তি সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি-জামায়াতের ‘দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে দলটি।
বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি যতই নালিশ করুক, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, পক্ষপাতহীন এবং অংশগ্রহণমূলক একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে। আপনাদের কারও এ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। হাঁটুভাঙা, কোমরভাঙা (বিএনপি) দল যতই কাকুতি-মিনতি করুক, এদের প্রলাপ শুনে লাভ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কথা বলুন জনগণের সঙ্গে গিয়ে। এ নগরীতে জনস্রোতের মধ্যে কূটনীতিক বন্ধুরা আপনারা সিভিলে গিয়ে কথা বলুন। মানুষ কী চায়।’
প্রায় একযুগ ধরে বিএনপির জাতীয় সম্মেলন না হওয়ার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রায় একযুগ ধরে কোনও সম্মেলন ছাড়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আমাদের তিনটা সম্মেলন হয়েছে। ঘরে যাদের গণতন্ত্র নেই তারা দেশে গণতন্ত্র কীভাবে দেবে? কূটনীতিক বন্ধুদের বলবো, এই কথাটা তাদের জিজ্ঞেস করুন। তাদের ঘরে গণতন্ত্র নেই কেন?’
সরকারের বৈধতা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈধতা দেবে এই দেশের জনগণ। আমরা জনগণের বৈধতা নিয়ে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাবো। আগামী নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনতে হবে। দেশের মানুষ শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা বক্তব্যের প্রশংসা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাহস বঙ্গবন্ধুর কন্যার আছে। দেখেন না, কথা বলেন, কাউকে ছেড়েছুড়ে কথা বলেন না! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা সত্যের প্রশ্নে আপস করেন না। অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে, এটি আসলে অন্তিমযাত্রা। উপরে উপরে পদযাত্রা, তলে তলে সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আগুন সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রস্তুত থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচনও ঘনিয়ে আসছে। তারা (বিএনপি) যত চেষ্টাই করুক, বাংলাদেশে সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সংবিধান আর নির্বাচন কারও জন্য বসে থাকবে না। বাংলাদেশের সংবিধানই বলে দেবে কীভাবে নির্বাচন হবে।’
বিএনপির দুটি ‘গুজবের কারখানা’ আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একটি গুজবের কারখানা গুলশানে (বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়)। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। আরেকটি মিথ্যার কারখানা হচ্ছে নয়াপল্টনে (বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়); সেখানে মাইক লাগিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে অনবরত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।’
বিএনপি নেতারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। শেখ হাসিনার পতন ঘাটাতে তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বলছে আওয়ামী লীগ রোষানলে পড়বে। তারা জনরোষে পড়েছে? আবারও মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে এলে তাদের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি হবে। খেলা হবে, আসল খেলা এখনও বাকি।’
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, ত্রাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।