হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে এখন একজন যাত্রীর তিন-চার ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরের পিসিআর ল্যাব থেকে করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতার কারণে দিনে তিন-চার হাজার যাত্রীর সময় লাগছে অন্তত ৮-৯ ঘণ্টা করে। এতে যাত্রীদের বিমানবন্দরে অবস্থানকাল বেড়েছে। বেড়েছে ভোগান্তি।
বিমানবন্দরে দীর্ঘ সময় ভারী লাগেজ নিয়ে ঘোরাঘুরি করা কষ্টসাধ্য। তাই দীর্ঘ সময় বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ট্রলিই ভরসা। কিন্তু দেশের প্রধান বিমানবন্দরে এখন দিনে ২০ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। তাদের জন্য সচল ট্রলি আছে মাত্র এক হাজার ৪০০। যাত্রী অনুপাতে ট্রলির সংখ্যা কম এবং করোনা পরীক্ষায় গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের যাত্রীদের কাছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রলি আটকে থাকাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে ট্রলিসংকট তৈরি হয়েছে। বয়স্ক, অসুস্থ ও শিশু সঙ্গে থাকলে বেশি বিপত্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে অনেকে মাথায় তুলে নেন ভারী মালপত্র।
সংকট কাটাতে বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর দুই দফা কড়া হুঁশিয়ারির পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গত ১২ ডিসেম্বর এবং ২২ ডিসেম্বর বিমানবন্দর পরিদর্শনকালে দায়িত্বে অবহেলা হলে অভিযুক্তদের ‘চাকরিচ্যুত’ করা হবে—এমন হুঁশিয়ারিও দেন প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু পরিদর্শনের এক দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে ট্রলি নিয়ে টানাটানি দেখা গেল।
সরেজমিনে গিয়ে গতকাল দেখা যায়, বিমানবন্দরে গাড়ির দীর্ঘ জট। টার্মিনালের দ্বিতীয় তলার বহির্গমনে দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। এই লাইন কখনো কখনো দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের বিমানবন্দরে বিদায় জানানোর জন্য তাদের সঙ্গে একাধিক স্বজন আসার কারণে বিমানবন্দরের সামনে লোকজনের জটলা বেড়েছে। অনেক যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে ট্রলি না পেয়ে লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।
সৌদি এয়ারলাইনসের রাত সাড়ে ১০টার এসভি ৮০৩ ফ্লাইটে রিয়াদ যাবেন প্রবাসী কর্মী পাভেল রহমান। বিমানবন্দরে অনেক ‘জটলা’ শুনে তিনি বিকেল ৫টায়ই হাজির হয়েছেন। টার্মিনাল-১-এ তিন নম্বর গেটের সামনে দুটি বড় ব্যাগ নিয়ে ট্রলির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘শুনেছি, বিমানবন্দরে অনেক সময় লাগছে। অনেকে ফ্লাইট মিস করছে, তাই আতঙ্কে আগেই চলে এসেছি। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেও ট্রলি পেলাম না। এখন ট্রলি ছাড়াই ভারী লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকতে হবে।
প্রবাসী কর্মীদের সময়মতো ট্রলি না পাওয়ার অভিযোগ তাত্ক্ষণিক প্রতিমন্ত্রীকে জানানো হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাত্রীরা কষ্ট পায়, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারো অবহেলার কারণে ট্রলির সংকট হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরটি-পিসিআর ল্যাবে বেশি সময় লাগায় ট্রলি আটকে থাকছে। ৫০ জন ট্রলি সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক উইং কমান্ডার এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান গতকাল বলেন, ‘যাত্রীর চাপ এত বেড়ে গেছে যে ট্রলি দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা আনছি আর ফুরিয়ে যাচ্ছে। পিসিআর ল্যাব রিপোর্ট দিতে দেরি করছে। আমরা অনেক অভিযোগ দিচ্ছি, কোনো কাজ হচ্ছে না। সেখানেও অনেক যাত্রীর কাছে ট্রলি আটকে থাকছে। পিসিআর টেস্টে দেরির দায়ভারও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর চাপানো হচ্ছে।’