খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে বড়দিন মানেই মাসজুড়ে সবাই মিলে হইচই করে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, সান্তাক্লজের কাছ থেকে দারুণ সব উপহার পাওয়ার প্রস্তুতি, গির্জায় কীর্তনের আয়োজন, নতুন পোশাকের ঘ্রাণ আর ঘুরতে যাওয়া। মানবকল্যাণে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত থেকেই। তবে সব দেশে কি দিনটি একইরকম?
বাংলাদেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবুও বাংলাদেশে বড়দিন একসময় প্রায় সকলের অংশগ্রহণে সর্বজনীন উৎসব ছিল। পরিবার ও বন্ধু সবাই মিলে ভেড়ার মাংস ও রুটি এবং কেক বসনিয়ান রুটি খাওয়ার চল ছিল নব্বইয়ের দশকে।
বলা হয়ে থাকে, আমেরিকারও আগে বাংলাদেশে বড়দিনের উৎসব পালন শুরু হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সূত্রে সোয়া ২০০ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে ছুটি হিসেবে উদযাপিত হয় বড়দিন। ভারতীয় উপমহাদেশে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা জব চার্নকই প্রথম ক্রিসমাস ডে উদযাপন করেন।
ক্রিসমাস ট্রি না পেলে?
উপমহাদেশে ক্রিসমাস ট্রি খুব বেশি দেখা যায় না। ফলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বা ভারতের অনেক এলাকায় দেবদারু গাছ বা কলা গাছ দিয়েও ঘর সাজানোর চল দেখা যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম গির্জাটি তৈরি হয় ১৫৯৯ সালে পুরনো যশোরের কালিগঞ্জের কাছে সুন্দরবন এলাকায়। ভারতের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিনটি পালন করে। দক্ষিণ ভারতে জানালা বা ছাদের ওপর জ্বালানো হয় ছোট ছোট মাটির বাতি। তবে শহরের খ্রিষ্টানরা পাশ্চাত্যের মতোই তাদের অনুষ্ঠান পালন করে।
আলো নিয়ে খেলতে দেখা যায় চীনেও। ঘরে ও বাইরে কতভাবে আলোকসজ্জা করা যায় তার অনন্য উদাহরণ যেন চীন। সেজন্য চীনে ক্রিসমাস ট্রিকে বলা হয় আলোর গাছ। বড়দিন উপলক্ষে চীনারা কাগজ দিয়ে বানানো শিকল, ফুল ও বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজায়।
আর্জেন্টিনার নিনোস এনভুয়েতো
বড়দিনের সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য এদিন সবাই পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটায়। আর্জেন্টিনাও ব্যতিক্রম নয়। তারাও ক্রিসমাস ট্রি, উপহার ও সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করে পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে কাটায় দিনই। বাড়ি সাজাতে তারা সাদা ও লাল রঙের কাগজ ব্যবহার করে। বড়দিনে তারা মাংস, সেদ্ধ ডিম, রসুন ও মসলা দিয়ে বানানো ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘নিনোস এনভুয়েতো’ খেয়ে থাকে।
রাশিয়ায় ৭ জানুয়ারি
সারা বিশ্বে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করা হলেও রাশিয়ায় বড়দিন পালিত হয় ৭ জানুয়ারি। এর কারণ হলো দেশটিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। তবে কেউ চাইলে বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করতে পারে। আর নিউ ইয়ার পালনের মধ্য দিয়ে তাদের উৎসবের শুরু হয়।
টার্কি ডিনার
বড়দিনে অস্ট্রেলীয়রা ঐতিহ্যবাহী খাবার ছাড়াও টার্কি ডিনার খেয়ে থাকে। এছাড়া বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ এক ধরনের পুডিং তৈরি করা হয়। পুডিংটির একটি বৈশিষ্ট্য আছে। এতে থাকে একটি স্বর্ণের টুকরো। সবাই মিলে সেই পুডিং খাওয়ার সময় যার ভাগ্যে সেটি জোটে তাকে সৌভাগ্যবান বলে ধরা হয়।
নিউ জিল্যান্ডেও দুপুরের খাবারে টার্কি ও মুরগির মাংস দিয়েই চলে খাওয়ার পর্ব। এরপর শুরু হয় চা পানের আসর। আর রাতে আপনজনদের নিয়ে চলে বারবিকিউ পার্টি। ক্রিসমাস ট্রি’র নিচে রাখা উপহারের প্যাকেট খোলা দিয়ে বড়দিনের শুরুটা হয়।