ঠাকুর তুমি আমার দাদারে কই লইয়া গেলা। তোমরা আমার দাদারে এনে দাও। দাদায় কই, আমি কার লগে খেলমু। আর আমি দাদার লগে মোবাইল নিয়া খেলতে পারমু না। মোর দাদার লগে মোরে ক্যানো নেওনি। মুই দাদারে ছাড়া বাঁচমু না।
অভিযান ১০ ট্রাজেডির ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত বরগুনার বামনা উপজেলার লক্ষ্মীপুরা গ্রামের স্বপ্নীল হাওলাদার (১৪)-এর ৮ বছরের ভাই প্রত্যয় হাওলাদারের এমন কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে স্বপ্নীল হাওলাদারের মরদেহ তাঁর নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনরা। স্বপ্নীল ঢাকার উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাবা সঞ্জীব হাওলাদার ঢাকায় ঢাকায় একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন। আর মা লক্ষ্মী রানী গৃহিণী।
জানা গেছে, গ্রামের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে স্বপ্নীল, প্রত্যয় আর মা লক্ষ্মী রানী এই তিনজনে অভিযান ১০ লঞ্চের ডেকে বামনায় আসতেছিলেন। অগ্নিকাণ্ড ঘটার কিছু সময় আগে স্বপ্নীল হাওলাদারের প্রস্রাবের বেগ হলে সে লঞ্চের পেছনে বাথরুমে যায়। এমন সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। স্বপ্নীল তখন বাথরুম থেকে বের হয়ে ধোঁয়ার কারণে তার মায়ের কাছে আসতে পারেনি বলে জানায় তার মা। তার মায়ের ধারণা বাথরুমের মধ্যেই স্বপ্নীল দগ্ধ হয়ে গেলে কোনো মতে সেখান থেকে বেরিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়।
নিহত স্বপ্নীল হাওলাদরের মরদেহ বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র এলাকাজুড়ে চলে শোকের মাতম। মা লক্ষ্মী রানী ছেলের মরদেহের পাশে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
এ সময় তিনি তাঁর ছেলেকে হারানোর বর্ণানা দেন, বড় ছেলে প্রস্রাব করতে বাথ রুমে যাওয়ার সময় ছোট ছেলে প্রত্যয়ও দাদার পেছন পেছন কিছু দূরে যায়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছেলে তার কাছে চলে আসে। আগুন সমগ্র লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত তিনি বড় ছেলের জন্য লঞ্চে অপেক্ষা করছিলেন। আগুনের লেলিহান শিখা বেড়ে গেলে তিনি ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। তীরে ওঠে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও স্বপ্নীলকে তিনি পাননি। পরে ঝালকাঠি হাসপাতালের মর্গে তাঁর মরদেহ শনাক্ত করেন।
শুক্রবার রাত ১২টায় স্বপ্নীল হাওলাদারকে তার বাড়ির শ্মশানে সমাহিত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাত ৩টায় ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান ১০ ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়।