বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বুলবুল আহমেদ। ছুটি নিশ্চিত না হওয়ায় আগে বাস কিংবা ট্রেনের টিকিট কাটেননি। বৃহস্পতিবার তার ছুটি মঞ্জুর হয়েছে। তাই বাড়ি যেতে শুক্রবার সকালে গাবতলী বাস কাউন্টারে যান।
কিন্তু সেখানে হানিফ, শ্যামলী, এনার মতো বড় কোনো পরিবহনের টিকিট পাননি বুলবুল। অবশেষে ঢাকা নাটোর রুটে চলাচলকারী একটি লোকাল বাসের টিকিট বাড়তি দামে কিনে ঈদ যাত্রা শুরু হয় তার।
শুধু বুলবুল আহমেদই নন তার মতো অসংখ্য যাত্রী বাড়তি ভাড়া দিয়ে গাবতলী থেকে লোকাল বাসে গন্তব্য যাচ্ছেন আজ। যাত্রীদের অভিযোগ, বড় বড় পরিবহনের বাসের টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন লোকাল বাসের মালিকরা। ক্ষেত্র বিশেষ তারা, ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন।
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী এলাকা ঘুরে যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুলবুল আহমেদ বলেন, আমার বাড়ি নাটোর, সেখানে যাওয়ার বাস পেতেই গাবতলীতে আসা। ভালো বাসের টিকিটগুলো আগেই শেষ হয়ে গেছে জানি তবুও যদি পাওয়া যায়, অথবা কেউ যাত্রা বাতিল করে টিকিট ফেরত দেয়, এই আশায় ভালো বাসগুলোর কাউন্টারে আগে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কোথাও টিকিট পাইনি। তবে এ কথা জানতাম গাবতলী বাস টার্মিনালের একটু সামনে দিকে উত্তরবঙ্গের দূর পাল্লার লোকাল বাস পাওয়া যায়। তাই এখানে এসে বাস পেলেও ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছে তারা।
তিনি আরও বলেন, অন্য সময় এমনকি ঈদের সময়ও ভালো বাস অর্থাৎ দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল, হানিফ, গ্রামীণ, শ্যামলী পরিবহনের ভাড়া ৬০০ টাকা ছিল। কিন্তু এসব লোকাল বাস যেগুলো অন্য সময় সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় যাওয়া যায় তারা আজ ৮০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ৭০০ টাকায় একটি রানিং টিকিট কেটেছি তিশা স্পেশাল নামে বাসের।
ভাড়া বেশি আদায়ের বিষয়ে কথা হয় তিশা স্পেশাল বাসের সুপারভাইজারে আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বাসে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রী তোলা হয়েছে। দূরত্ব ভেদে সবার কাছ থেকে টিকিট দিয়ে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আপনারা ভালো বাসের কথা বলছেন, ভালো বাসের টিকিট তো সব শেষ, এখন যেসব যাত্রী আসবে তাদের আমাদের মতো এমন লোকাল বাসেই যেতে হবে। লোকাল বাস হোক আর যাই হোক ঈদে পরিবারের কাছে এই বাসের মাধ্যমেই যেতে পারছে। আমরাও দিনরাত এক করে নিয়মিত ট্রিপ দিচ্ছি, আমাদেরও তো ঈদ আছে, তাই একটু বেশি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছি।
একইভাবে পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলাগামী লোকাল বাস গাবতলী থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। সবগুলো বাসের যাত্রীদের একই অভিযোগ, সুযোগ বুঝে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
সকাল থেকে গাবতলী, কল্যাণপুর এলাক ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছর ঈদের আগে যেমন যাত্রী চাপ থাকে এবার সেই তুলনায় কম। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীকাল যাত্রী চাপ আরও বাড়বে।
রাজধানীর কল্যাণপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজ বাস কাউন্টারের সবুজ আহমেদ বলেন, ঈদ যাত্রায় এখন পর্যন্ত আমাদেরসহ ভালো বাসগুলোর শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। তবে আজ রাত ও আগামীকাল যাত্রী ও পরিবহন চাপ বাড়বে সড়কে। তখন যানজটের কেমন পরিস্থিতি হয় সেটাই দেখার বিষয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাস মালিক বলেন, ঢাকা শহরে টাউন সার্ভিসের বেশিরভাগ বাসই দূরপাল্লার রিজার্ভ বা এমনি ট্রিপ নিয়ে যেতে শুরু করেছে। আজ রাত এবং কাল এসব বাস ট্রিপ দেবে। ফলে যানজট বেড়ে ভালো বাসের শিডিউল নষ্ট হতে পার। এছাড়া যদি যানজট হয় তাহলে দীর্ঘ সময় বাসে থাকা দূরপাল্লার যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়বেন।